চমক দেখাবে জাকের, দলের প্রাণ রিয়াদ

আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের প্রত্যাশা খুব বেশি নয়। টাইগাররা শুধু যেতে চান পরবর্তী রাউন্ডে। এর জন্য এগুতে চায় ম্যাচ বাই ম্যাচ ধরে। দলও সাজিয়েছে সে অনুযায়ী। কুড়ি ওভারের ফরম্যাটে সেরাদের বাছাই করেই নির্বাচকরা গুছিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে বসতে যাওয়া বিশ্বকাপের জন্য ১৫ সদস্যের স্কোয়াড।
যারা ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে দেশটির বিপক্ষে বিশ্বকাপের আগে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলার উদ্দেশ্যে। আর দেশ ছাড়ার আগে নিজেদের স্কোয়াডে থাকা ক্রিকেটারদের নিয়ে মন্তব্য করে গেছেন হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। গতকাল ঐ ভিডিও প্রকাশ করেছে বিসিবি।
ভিডিওর শুরুতে টাইগার অধিনায়ক অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে হাথুরু বলেন, ‘শান্ত আমাদের অধিনায়ক। খুব ভালো নেতা, সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে জানে। ড্রেসিংরুমে ছেলেদের সঙ্গে খুব ভালোভাবে মিশতে পারে, আবার মাঠে নেমে খুবই প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ হয়ে যায়। আমার মনে হয় প্রথমবারের মত অধিনায়ক হিসেবে তার হাতে এবার বিশ্বকাপে বড় দায়িত্ব আর এই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য সে যে প্রস্তুত এই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।’
গত পরশু বিসিবি এই ধারাবাহিকের প্রথম পর্বের ভিডিও প্রকাশ করেন সেখানে কথা বলতে দেখা যায় পেসার তাসকিন আহমেদকে। সেখানে তাসকিন জানিয়েছিলেন তার জন্য যখন এবার দল ঘোষণার তারিখ দুই দিন পেছানো হয় সেসময় তার ২০১৯ সালের অশ্রুশিক্ত এক বিকেলের কথা মনে পড়ে। 
এরপর আর একবার মাঠে নামার জেদেই শুরু করে কঠোর অনুশীলন। এতে বোঝাই গিয়েছে তাসকিন কতটা আবেগী। টাইগার হেডকোচও বলেছে একই কথা। ঢাকাইয়া এক্সপ্রেসকে নিয়ে তিনি বলেন, ‘তাসকিন মানুষ হিসেবে বেশ আবেগী। সে যদি ভালো মুডে থাকে, আমরা তার কাছ থেকে সেরাটা পাই। তিনি সতীর্থ ও কোচিং স্টাফের কাছে অনেক জনপ্রিয়। সব সময় দলের জন্য সেরাটা দেওয়া ও উন্নতির চেষ্টা করে। দলের মধ্যে তিনি দারুণ চরিত্র।’

এদিকে বাংলাদেশের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে সব বিশ্বকাপে খেলার ইতিহাস গড়তে যাচ্ছে সাকিব আল হাসান। কোচের মত এটি হবে সাকিবের ক্যারিয়ারের সেরা আসর। বলেন, ‘তিনি কিংবদন্তি। আমরা সবাই জানি সাকিব সবগুলো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেছে। আমি আশা করি এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ তার সবচেয়ে সেরা আসর হবে। তিন বিভাগেই অবদান রাখবে। ভালো নেতা দলের সঙ্গে থাকে। খেলোয়াড়দের সঙ্গে খুব ভালো মিশতে পারে, তাকে সবাই সম্মান করে। খেলাটাকে খুব ভালো বুঝে।’ 
এছাড়া দলের আরেক ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে কোচ বলেন, ‘সম্ভবত দলের প্রাণ মাহমুদউল্লাহ। সে ড্রেসিংরুমে মধ্যে শান্ত একটা পরিবেশ নিয়ে আসে। সে যখন কথা বলে, সবাই সেটা শুনে। আমার মনে হয় সে এখন খুব ভালো অবস্থায় আছে মানসিকভাবেও। তার ব্যাটিং সম্প্রতি ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছেছে। তার খেলায় ভয়হীন ব্যাপার আছে। সে দলের জন্য ভালো। চাপের পরিস্থিতি সামলে নিয়ে তরুণদের পরামর্শ দেবে বিশ্বকাপে।’
এসময় আসন্ন বিশ্বকাপে দলের হয়ে চমক দেখাবে জাকের আলী বলে মনে করেন হাথুরুসিংহে। তরুণ এই উইকেটরক্ষক ব্যাটারকে নিয়ে কোচ বলেন, ‘জাকের জাতীয় দলে নতুন। আমি এখন পর্যন্ত যা দেখছি তার ব্যাটিংয়ে সময় শান্ত একটা ভাব থাকে। চাপের সময়ে সে নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে পারে, ভার্সেটাইল প্লেয়ার। কিপিং করতে পারে, ফিল্ডিং করতে পারে। অনুশীলনের সময় অনেক পরিশ্রম করে। আমার মনে হয় সে এই বিশ্বকাপে চমক দেখাতে পারে।’ 
তবে হাথুরু অপেক্ষ করছেন বিশ্বকাপে দলের একমাত্র লেগ স্পিনার ব্যাটার রিশাদ হোসেনের পারফম্যান্স দেখতে। এই লেগীকে নিয়ে বলেন, ‘রিশাদ খেলোয়াড় হিসেবে কীভাবে উন্নতি করছে সেটা দেখার জন্য আমি খুব রোমাঞ্চিত। যখন আমরা তাকে প্রথম দেখি, বাংলাদেশের ক্রিকেটে লেগ স্পিনার খুবই কম। তবে সে ঐরকম ক্লাসিক্যাল লেগ স্পিনার নয় যেমনটা পুরো দুনিয়াতে দেখা যায়।  সে খুবই লম্বা, ভালো অ্যাথলেট। দুর্দান্ত ফিল্ডার, দলের অন্যতম সেরা ফিল্ডার। দ্রুত শিখতে পারে। জানি না তার মাথার ভেতর কী কাজ করে, কিন্তু চাপের সময়ে তাকে নির্ভার লাগে। সময়ের সাথে সাথে সে ব্যাটিংয়ে ভালো পারফরম্যান্স দিচ্ছে। আমি চাইবো সে ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিক হবে।’
এছাড়া দলের অন্যান্য খেলোয়াড়দের নিয়ে কোচ বলেছেন, সৌম্য সরকারকে ম্যাচ উইনার। তানজিদ তামিমের অনেক বড় ভবিষ্যৎ আছে সামনে। তাওহিদ হৃদয় প্রতিভাবান ও খুবই গতিময় একজন খেলোয়াড়। স্পিনার তানভির ইসলাম বিশেষ দক্ষতা সম্পন্ন খেলোয়াড়। শেখ মাহেদী চাপের সময়ে খুব কৌশলী বোলিং করে। আর পেসার শরিফুল ইসলামকে দ্রুত সব ভুলে যায় তাই তাকে ডেকেছেন গোল্ড ফিশ। আর সাইফুদ্দিনের সঙ্গে লড়াইয়ে শেষ মুহূর্তে স্কোয়াডে প্রবেশ করা তানজিম সাকিবকে তো বড় মনের মানুষই বলে দিয়েছেন কোচ। 
তবে আইপিএল খেলে ফেরা মোস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে হাথুরু বড় স্বপ্ন দেখছেন। বাঁহাতি পেসারকে নিয়ে হাথুরু বলেন, ‘মোস্তাফিজ…তাকে নিয়ে আমি কী বলব? ফিজ হচ্ছে বিশেষ ধরনের পেসার, এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল বিশ্ব ক্রিকেটেই। সে তার কব্জি দিয়ে অনেক কিছু করতে পারে, যেটা খুব কম লোকই পারে। লম্বা সময়ে ধরে খেলছে, অভিজ্ঞতা আছে, আইপিএল খেলেছে। দলের মিটিংয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলতে পারে। তার পেস ডিপার্টমেন্টকে লিড করে। সে খুব মজার। সে যা বলে আমি অনেক কিছুই বুঝি না। কিন্তু দেখে মনে হয় সবাই খুব উপভোগ করে। সে যখন কিছু বলে, সবাই হাসে।’

Leave a Reply