মশা নিধন কাজে ব্যবহারে একটি বিদেশি ওষুধ সংগ্রহ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। নগর ভবনের বারান্দায় বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে ওই ওষুধের ফিল্ড টেস্ট হয়েছে। এ জন্য ওষুধের নমুনা সংগ্রহ এবং ছোট একটি খাঁচায় ৫০টি মশা রাখা হয়। এরপর মাত্র এক হাত দূর থেকে এর চারপাশে একবার করে ওষুধ ছিটানো হয়। কিন্তু এরপরও খাঁচায় থাকা সব মশা মরেনি। মাত্র ২৪ শতাংশ মশা অচেতন অবস্থায় পড়েছিল। শুক্রবার (২ আগস্ট) দুপুরে ডিএসসিসি’র নগর ভবনের বারান্দায় এভাবেই মশা নিধনের ওষুধ পরীক্ষা করতে দেখা গেছে।
দীর্ঘদিন ধরে যেসব ওষুধ ব্যবহার হয়ে আসছে তাতে মশা মরে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এরপর উচ্চ আদালত ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে নতুন করে মশার ওষুধ আনার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এরইমধ্যে বায়ার করপোরেশন নামে ভারতীয় কোম্পানির ‘Aque k Delthrean (Deltamethrin) 2%EW’ নামে ওষুধটির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এটি জার্মানির তৈরি যা পানির সঙ্গে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হয়। শুক্রবার (২ আগস্ট) এই ওষুধের ফিল্ড-টেস্ট হয়। ওই পরীক্ষায় উপস্থিত কর্মকর্তারা নানা প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি।নগরীর মশা নিধনের জন্য যে কীটনাশক সংগ্রহ করা হয়, প্রথমে তা ডিএসসিসির নিজস্ব পদ্ধতিতে পরীক্ষা করা হয়। সিটি করপোরেশনের ফিল্ড টেস্ট পরীক্ষার নিয়ম অনুযায়ী দুই বর্গ স্কয়ার ফুটের তিনটি মশারির খাঁচায় ৫০টি মশা রাখা হয়। এরপর এক হাত দূর থেকে এর চারপাশে ফগিং করা হয়।
শুক্রবারের পরীক্ষায় ১নং নমুনায় ৫০টি মশার মধ্যে ১৩টি, ২নং নমুনায় ১৪টি ও ৩নং নমুনায় ৯টি মশা জ্ঞান হারিয়েছে। ফলে এর শতকরা হার দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে-২৬, ২৮ ও ১৮ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টা পর আগামীকাল (শনিবার) এই খাঁচাগুলো আবার দেখা হবে। যদি মৃতের সংখ্যা ৮০ শতাংশ হয় তাহলে ধরে নেওয়া হবে এই ওষুধের মান ঠিক রয়েছে। এরপর দ্বিতীয় পরীক্ষার জন্য নমুনাটি পাঠানো হবে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ও খামার বাড়ির কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে। সেখানেও দুটি পরীক্ষা শেষে ওষুধ চূড়ান্ত করা হবে।
নমুনা পরীক্ষার সময় উপস্থিত সিটি করপোরেশনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের প্রশ্ন ছিল, এত কাছ থেকে ওষুধ ছিটানোর পরও কেন মশাগুলো মারা গেলো না।তাদের প্রশ্ন, এখানে মশাকে ওষুধ দেওয়ার পর সেগুলো উড়ে যেতে পারছে না। বন্দি অবস্থায় থেকে প্রতিরোধের সুযোগ নেই। মাঠ পর্যায়ে তো এত কাছ থেকে ওষুধ প্রয়োগের সুযোগ নেই।
মশা উড়ে চলে যায়। তাছাড়া ওষুধ দেওয়ার পর সেগুলো তাদের নিজের মতো করে উড়ে গিয়ে আলো-বাতাস ও খাবার গ্রহণ করে আবার সুস্থ হওয়ার সুযোগ থাকে। আর এ অবস্থায়ও যদি সবগুলো মশা না মরে তাহলে মাঠ পর্যায়ে মশা কীভাবে মরবে?এমন প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে পারেনি আইইডিসিআরের কর্মকর্তারা। আর নমুনা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের বায়ার করপোরেশনের শুভ দে বলেন, ‘এই ওষুধের পরীক্ষা এভাবেই হয়। এটিই নিয়ম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোস্তাফিজুর রহমান ও প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই প্রশ্ন আমাদেরও। আমরা তো আর টেকনিক্যাল পারসন না। পরীক্ষার কাজে যারা নিয়োজিত, তারাই ভালো বলতে পারবেন।
জানতে চাইলে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সাবরিনা ফ্লোরা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘এখানে যেই মশা মরবে সেটি ফিল্ড পর্যায়েও মরার কথা। ফিল্ডে যদি একটি মশা ওষুধে আক্রান্ত হয় সেটি যেখানেই যাক পড়ে যাবে। একটি পরিপূর্ণ মশা না খেয়ে পাঁচ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। সে জন্য তাদের কাছে ২৪ ঘণ্টা কিছুই না। ২৪ ঘণ্টায় যদি মশা মরে সেটি মাঠ পর্যায়েও মারা যাবে।’
মশা নিধন কাজে নিয়োজিত কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মাঠ পর্যায়ে তো মশা মেশিনের শব্দ শুনেই তিন থেকে চার তলা বা তারও উপরে উঠে যায়। মশা তো ওষুধের নাগাল পায় না। আর এখানে এত কাছ থেকে ধীরগতিতে ওষুধ দিয়েও মশাকে মারা গেলো না। তাহলেই বুঝে নেন, ওষুধে মশা মরে কিনা?
জানতে চাইলে ডিএসসিসি’র সহকারী ভাণ্ডার ও ক্রয় কর্মকর্তা লিয়াকত হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওষুধ প্রয়োগের ৩০ মিনিট পর এক চতুর্থাংশ মশা মরছে। ২৪ ঘণ্টা পর যদি ৮০ ভাগ মশা মরে তাহলে আমরা ধরে নেবো এই ওষুধ কার্যকর।’