বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে জখম করেছেন ছাত্রলীগ নেতা। শুক্রবারসন্ধ্যায় গাবতলী উপজেলার জামিরবাড়িয়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে। কলেজছাত্রীর বাবার নাম ফুল মিয়া (৫২)। তিনি গাবতলী উপজেলার সোনারায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। গুরুতর আহত
ফুল মিয়াকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শজিমেক) ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই কলেজছাত্রীকে উত্ত্যক্তের ঘটনায় অভিযুক্ত তরিকুল ইসলাম ওরফে তরি (২৫)সোনারায় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। এ ঘটনায় কলেজছাত্রীর ভাই আমির হোসেন বাদী হয়ে শনিবার গাবতলী মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে তরিকুলসহ চারজনের নাম উল্লেখ
করে এবং অজ্ঞাত আরও ৮ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। গাবতলী মডেল থানায় দায়ের হওয়া মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গাবতলী উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের খুপি গ্রামেরবাসিন্দা ও আওয়ামী লীগ নেতা ফুল মিয়ার কলেজপড়ুয়া মেয়েকে (১৭) প্রেমের প্রস্তাব দেন একই গ্রামের বাসিন্দা ও ছাত্রলীগ নেতা তরিকুল ইসলাম। সেই প্রস্তাবে সাড়া না পেয়ে কলেজে যাতায়াতের পথে
ছাত্রীটিকে উত্ত্যক্ত করতেন তরিকুল। ওই ছাত্রী উত্ত্যক্ত করার বিষয়টি বাবা-মাকে জানান। মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার বিষয়টি নিয়ে তরিকুলের অভিভাবকদের কাছে নালিশ করেন ফুল মিয়া। এতে ক্ষিপ্ত হন তরিকুল।গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে ফুল মিয়া বাজার করার জন্য স্থানীয় জামিরবাড়িয়া হাটে গেলে ছাত্রলীগ নেতা তরিকুল এবং তাঁর সঙ্গীরা বাজারের মধ্যে তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করেন।
পরে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। ফুল মিয়াকে উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)সেলিম হোসেন বলেন, তরিকুল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি। আর ফুল মিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। ফুল মিয়ার কলেজপড়ুয়া মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে সাড়া না পেয়ে ক্ষিপ্ত ছিল
তরিকুল। পরে তাঁর অভিভাবকের কাছে নালিশ যাওয়ায় আরও ক্ষিপ্ত হয়ে রামদা দিয়ে ফুল মিয়ার শরীরের একাধিক স্থানে কুপিয়ে জখম করেন তিনি। ঘটনার পর গা ঢাকা দিয়েছেন তরিকুল। তাঁকে গ্রেপ্তারেরচেষ্টা চলছে। তরিকুলের সাংগঠনিক পরিচয় নিশ্চিত করেছেন গাবতলী উপজেলা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সাবেক সভাপতি মিলটন হোসাইন। তিনি বলেন, তরিকুল বর্তমানে সোনারায় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। আওয়ামী লীগ নেতাকে প্রকাশ্যে কুপিয়েছেন তিনি। তবে ছাত্রলীগের উপজেলা কমিটি না থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব এখন জেলা কমিটির। সোনারায় ইউনিয়নআওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান আহত ফুল মিয়ার রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত করেন। তাঁর দাবি, ‘তরিকুলের গোটা পরিবার জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাঁর মতো ছেলে কীভাবে
ছাত্রলীগের সভাপতির পদ পেল, তা আমার জানা নেই।’ বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার রায় বলেন, তরিকুল সোনারায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তিনি ভারপ্রাপ্তসভাপতির দায়িত্বে ছিলেন কিনা তা জেলা কমিটির জানা নেই। অসীম কুমার রায়ের দাবি, কলেজছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করা এবং আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে আহত করার বিষয়টি জানার পর শনিবার জেলা
ছাত্রলীগের জরুরি সিদ্ধান্তে তরিকুলকে আজীবনের জন্য সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাইমুর রাজ্জাক বলেন, তরিকুল বখাটে ও তাঁর গোটা পরিবার যে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তা এত দিন জেলা কমিটির জানা ছিল না। ইউনিয়ন কমিটি গঠন করে উপজেলা কমিটি। উপজেলা কমিটির ভুলের কারণেই এখন ছাত্রলীগের বদনাম হচ্ছে।