প্রেম করে বিয়ে। তবে সেই বিয়েতে ছিল না কোনো সামাজিক স্বীকৃতি। তারপর স্ত্রীর গর্ভে সন্তান। সেই স্ত্রী-সন্তানকে অস্বীকার করায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। ঘটনার ১৯ বছরে এসে এখন তাঁদের স্বীকৃতি দিতে রাজি।
আর সন্তানের স্বীকৃতি পেয়েই বাবা-মাকে ইসলামের রীতিতে বিয়ে দিয়ে নজির গড়লেন মিলন নামে এক যুবক। অভিনব এ ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার (৩১ জুলাই) যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে। ঘটনাটিকে ঐতিহাসিক ও স্মরণীয় বলে আখ্যা দিয়েছেন কারা কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, ঝিনাইদহের লক্ষ্মীপুর গ্রামের মেয়ে মালাকে প্রেম করে বিয়ে করেন একই গ্রামের আজিজ মৃধার ছেলে ইসলাম। ২০০০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় মৌলভীর মাধ্যমে বিয়ে করেন তারা। ২০০১ সালের ২১ জানুয়ারি মিলনের জন্ম হয়।
কিন্তু একসময় মালার সঙ্গে বিয়ে ও মিলনের পিতৃত্ব অস্বীকার করে বসেন ইসলাম। মালাকে মেনে না নেয়ায় মালার বাবা ইসলামের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেন। এ মামলায় বিচারিক আদালত ইসলামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে ইসলাম আপিল করলে রায় বহাল রাখেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করলে সেখানেও ব্যর্থ হন ইসলাম। পরবর্তীতে আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন করেন ইসলাম।সেই রিভিউ শুনানিতে আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রধান বিচারপতির নেত্বত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চে মালা ও মিলনের স্বীকৃতির বিষয়টি সামনে আনেন।
এর আগে মিলনের ডিএনএ টেস্টে প্রমাণিত হয় যে, তিনি মালা ও ইসলামেরই সন্তান।আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল আপিল বিভাগকে বলেন, মালা ইসলামেরই স্ত্রী। ডিএনএ রিপোর্টে প্রমাণিত যে, মিলন তাদের সন্তান।
প্রায় দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে চলা আইনি লড়াইয়ের নিষ্পত্তি ঘটে। আপিল বিভাগ ইসলামকে জামিনে মুক্তির নির্দেশ দেন। এরপর বুধবার যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে মালা-ইসলামের মধ্যে পুনরায় বিয়ে হয়। সেখানে বিয়ের রেজিস্ট্রি (কাবিনও) হয়। বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন মালা-ইসলামের ১৮ বছর বয়সী ছেলে মিলন।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার আবু তালেব বলেন, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ইসলাম আদালতে জামিন আবেদন করলে আদালত শর্ত দেন মালাকে স্ত্রী ও মিলনকে সন্তানের স্বীকৃতি দিলে জামিন দেওয়া হবে। আদালতের শর্তে ইসলাম রাজি হয়। এরপর আদালতের নির্দেশে জেলা প্রশাসকের অনুমতিক্রমে বুধবার কেন্দ্রীয় কারাগারের ভারপ্রাপ্ত সুপার, দুই পক্ষের আত্মীয় স্বজন ও তাদের ছেলে মিলনের উপস্থিতিতে ইসলাম ও মালার বিয়ে দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিয়ের কাবিন উচ্চ আদালতে জমা দিলে আদালত ইসলামের জামিন মঞ্জুর করেন। আদেশের কপি হাতে এসে পৌঁছালে ইসলামের মুক্তি মিলবে বলে জানান জেলার আবু তালেব।আগামী ২৯ আগস্ট এ বিষয়ে অগ্রগতি জানাতে নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।