বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাতকারে গুম, খুন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবলীলায় মিথ্যাচার করেছেন বলে দাবি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভীর। আজ বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় ডেঙ্গু পরামর্শ কেন্দ্র ও হটলাইনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রিজভী এ দাবি করেন। বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) উদ্যোগে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
রিজভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বলেছেন, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের কথা নাকি গণমাধ্যমে বেশি বেশি প্রচার করছে! আসলে কী তাই? সাংবাদিক ঢাকা থেকে গুম হয়ে উদ্ধার হয় সুনামগঞ্জে। তারপরও নাকি গণমাধ্যম বেশি বেশি প্রচার করা হচ্ছে বলে সাক্ষাতকার দিয়ে অবলীলায় মিথ্যা বলেছেন। তাহলে আমাদের ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, সাইফুল ইসলাম হিরু, হুমায়ুন পারভেজ, জাকির, সুমনসহ অন্যরা কই? প্রধানমন্ত্রী জবাব দিন। বিবিসির মতো গণমাধ্যমে আপনি অবলীলায় মিথ্যা বলে গেলেন। নাকি যতটুকু প্রচার করা দরকার ততটুকু তারা প্রচার করতে পারছে না। গণমাধ্যমের ওপর ভয়ঙ্কর বিধিনিষেধের তরবারি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘রাতে বা দিনে কেউ যদি সত্য কথা বলতে চায় তাহলে তার কাছে অজানা টেলিফোন চলে আসে। তারপরও প্রধানমন্ত্রী বিবিসির মতো একটি গণমাধ্যমে অবলীলায় মিথ্যা কথা বলেছেন। এ পরিস্থিতি চলতে পারে না। এটা চলতে দেওয়া যায় না। আজকে এই দুর্দিন ও মহামারী, সরকারের দু:শাসন অনাচার অত্যাচারের বিরুদ্ধে যেন কোনো কথা বলতে না পারে সেজন্যই দেশের জনগণের প্রাণপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে সবাই মুখাপেক্ষি। যে আদালত মানুষের আস্থার শেষ ভরসা ছিল সেই আদালতও সরকারের মন্ত্রী এমপিদের ভাষায় কথা বলছে। দেশে ন্যায় বিচার থাকলে বেগম খালেদা জিয়া জেলে থাকতেন না। যে নেত্রী গণতন্ত্রের জন্য সারা জীবন লড়াই করেছেন তাকে বন্দী করা হয়েছে।’
রিজভী বলেন, ‘আসলে সরকার মানুষের সামনে বক্তব্যের ধোয়া উড়াচ্ছে। মানুষের সাথে রং তামাশা করছে। অন্যদিকে বিএনপি সবসময় জনকল্যাণে কাজ করে। আজও ডেঙ্গু নিয়ে বিশিষ্ট চিকিৎসকেরা সচেতন করতে কাজ করছে। লিফলেট বিতরণ করছে।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দেশে একটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি বিরাজমান। ডেঙ্গু রোগ মহামারীর রূপ নিয়েছে। কিন্তু সরকার কোনো গুরুত্ব দেয়নি। ভোটারবিহীন সরকার ডেঙ্গু সম্পর্কে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সংস্থা ও সুশীল সমাজের সতর্ক বার্তাকে ভ্রুক্ষেপ করেনি। বরং মশকরা আর উপহাস করেছে। যিনি প্রধান দায়িত্বে ছিলেন সেই মন্ত্রী দেশের বাইরে গেছেন। শুনেছি প্রধানমন্ত্রীও অসুস্থ তিনিও দেশের বাইরে। কিন্তু এখন কুরবানীর ঈদ উপলক্ষে লাখ লাখ লোক গ্রামে যাবেন। কিন্তু ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই।’
তিনি বলেন, ‘যেখানে ঢাকাতেই এই রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসক, শিক্ষার্থীসহ অনেকেই প্রতিদিন মারা যাচ্ছে। তাহলে গ্রামগঞ্জের কী অবস্থা হবে? ৬৪ জেলায় এখন ডেঙ্গু। এটা আরও তীব্রতর হলে কি পরিমাণ মড়ক শুরু হবে? তার ইয়ত্তা নেই। অথচ সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সরকারের প্রস্তুতি কী। কী করছে তারা?’
ড্যাবের কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করে রিজভী বলেন, ‘আজকে ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ড্যাব হটলাইন চালু করেছে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে কেউ ডেঙ্গু বিষয়ে পরামর্শ জানতে চাইলে সহজেই সহযোগিতা পাবেন। ০১৩০৬৮৫৯৬৬৪ নাম্বারে কল করলে যে কেউ ডেঙ্গু বিষয়ে পরামর্শ জানতে পারবেন। বিএনপির অন্য অঙ্গ সংগঠনগুলোও পাড়ায় মহল্লায় ডেঙ্গু সচেতনতায় লিফলেট বিতরণ করছে।’
ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- ড্যাবের মহাসচিব আবদুস সালাম, সিনিয়র সহসভাপতি মো. আবদুস সেলিম, মহাসচিব অধ্যাপক ডা. আব্দুল সালাম, কোষাধ্যক্ষ ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, ডা. মো. ফখরুজ্জামান, ড্যাবের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ডা. মো. সায়েম, ফারুক কাশেম প্রমুখ।