প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ চান ২০০৭ সালের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামিরা। যারা ২০ থেকে ২২শে আগস্ট ঘটে যাওয়া উত্তাল ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তৎকালীন “ওয়ান ইলেভেন” খ্যাত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালে দেশের দুই রাজনৈতিক দলের প্রধান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করে। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার আদায় এবং দুই নেত্রীকে মুক্তির জন্য সারা দেশে আন্দোলনে ফেটে পড়ে ছাত্র জনতা।
আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ “শেখ হাসিনার মুক্তি-একদফা” ঘোষণা করে এবং দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে মুক্তি ছাড়া দেশে কোন নির্বাচন না করার আন্দোলন শুরু করে। ২০০৭ সালের ২১শে আগস্ট উত্তাল ছাত্র আন্দোলন গণআন্দোলনে রূপ নেয়। রাজধানী ঢাকায় ব্যাপকভাবে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ভাংচুর, সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের লেলিহান শিখায় পুড়েছে গাড়ি, দোকানপাট সহ পুলিশবক্স গুলো। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাত ৮টায় কারফিউ জারি করতে বাধ্য হয় ওয়ান ইলেভেন সরকার। আন্দোলন দমন করতে ১১টি থানায় ৮৪ হাজার ছাত্র জনতাকে আসামি করে ৫৩টি মামলা দায়ের করে পুলিশ প্রশাসন। দীর্ঘ ১৮দিন পর ৮ই সেপ্টেম্বর ৭টি থানায় ১৩টি মামলার চার্জশীট দেওয়া হয়, ৮টি থানায় ৩৮টি মামলার ফাইনাল প্রতিবেদন দেওয়া হয় এবং বাকি ২টি মামলা তদন্তাধীন রাখা হয়।
চার্জশুটভূক্ত ১৩টি মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার অধ্যাপক সহ ৩৬ জনকে পুরো গণআন্দোলনের জন্য দায়ী করে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসাবে বিচারকার্য শুরু করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার অধ্যাপক হলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. সদরূল আমিন, সাধারণ সম্পাদক ড. আনোয়ার হোসেন, শিক্ষকনেতা ড. হারূন-অর-রশিদ ও ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগসহ ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ছাত্রলীগের আসামিরা হলেন, সাবেক সহ-সভাপতি অর্পনা পাল, ঢাবি এফ রহমান হল ছাত্রলীগের নজরুল ইসলাম রাসেল, ঢাবি জিয়া হল ছাত্রলীগের রিফাত হোসেন জিকু, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সামসুল কবির রাহাত, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মিতুল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ও বর্তমান ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বর্তমান জবি কর্মকর্তা কাজী মনির হোসেন। তিতুমীর কলেজ আঁখি হল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আহসান হাবিব ও তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মোঃ ফরিদ ঊদ্দিন।
এছাড়া জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল থেকে আসামিরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি হাসান মামুন, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, ছাত্রদল নেত্রী তানজিম চৌধুরী লিলি, শাহীনুর নার্গিস, ছাত্রদল নেতা আনোয়ার হোসেন, কামরুল হাসান কচি, আজিজ হাসান, রোকনুজ্জামান, কামরুজ্জামান, মনিরুজ্জামান সর্দার। বাকী ১৩ জন রাজনৈতিক দলের বাইরে মতিঝিল, নিউমার্কেট, ধানমন্ডি ও মিরপুর থানার আসামি।ছাত্রলীগ থেকে যে নয় জনকে আসামী করা হয় তাদের অনেকেই খুবই অসহায় জীবন যাপন করছেন বলে জানা যায়।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ও বর্তমান ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান বলেন, আমরা নেত্রীর জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, সেখানে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা খুবই সামান্য। আমাদের দল ক্ষমতায়, নেত্রী জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছেন। আমি নেত্রীর একজন পরীক্ষিত কর্মী হিসেবে সারা জীবন দলের জন্য কাজ করে যেতে চাই।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আহসান হাবিব বলেন, আমাদের নেত্রী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়, পর পর তিনবার প্রধানমন্ত্রী, আমাদের কি বা চাওয়া পাওয়া থাকবে, শান্তিতে ঘুমোতে পারছি এটাই কম কিসের। তবে নেত্রীর সাথে আনুষ্ঠানিক দেখা করতে পারলে জীবন সার্থক হতো।