রাজিব আহমেদ, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর সাব-রেজিষ্ট্রার সুব্রত কুমার দাসের বিরুদ্ধে ঘুষ নিয়ে দলিল অনুমোদনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে তার ঘুষ গ্রহণের কয়েকটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, যোগদানের পর থেকেই দলিল প্রতি ১৫শ’ থেকে ৩৫শ’ টাকা উৎকোচ নিয়ে আসছেন সুব্রত কুমার দাস। নিরুপায় জনগণ ও দলিল লেখকরা জিম্মি তার কাছে। এনিয়ে সুব্রত কুমার দাসের বিরুদ্ধে আন্দোলনও হয়েছে কয়েক দফা। কিন্তু তিনি অদৃশ্য ক্ষমতা বলে উপরের কর্তাদের খুশি করে পরিস্থিতি নিজের নিয়ন্ত্রনে রেখেছেন এবং নির্বিঘ্নে ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রেজিষ্ট্রি অফিসে প্রকাশ্যে ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় আলোচনায় এসেছেন নতুন করে। জানা গেছে, ১৫ আগস্ট রাতে ভুক্তভোগী একজন দলিল লেখক মোঃ সোহেল রানা তার ফেসবুক আইডি থেকে ঘুষ নেওয়ার একটি ভিডিও পোস্ট করেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, একটি দলিল রেজিস্ট্রি করার বিনিময়ে সাব-রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার দাস নিজেই একজন দলিল লেখকের কাছ থেকে উৎকোচ হিসেবে ১৫শ’ টাকা নিচ্ছেন।
আরেকটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একটি দলিলের উৎকোচ বাবদ নকল নবিস আনিসকে প্রথমে ৩ হাজার টাকা দিলে আনিস উক্ত দলিল লেখককে বলেন স্যার ৩৫শ টাকা দিতে বলেছেন। পরে দলিল লেখক টাকা না দিয়ে সাব রেজিষ্ট্রারকে ফোন দিতে বললে আনিস সাথে সাথে সাব-রেজিষ্ট্রার সুব্রত কুমার দাসকে ফোন দিয়ে কথা বলেন। পরে ৩ হাজার টাকা ফেরৎ দিয়ে বলেন ৩৫শ টাকার কমে হবে না। বাধ্য হয়ে উক্ত দলিল লেখক ৩৫শ টাকাই প্রদান করেন।
এদিকে ভিডিওগুলো বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ এবং ব্যক্তিগত আইডিতে শেয়ারের মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এতে সমালোচনার ঝড় উঠতে থাকে সোস্যাল মিডিয়ায়।
অভিযোগ আছে, সুব্রত কুমার দাস ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে শাহজাদপুরে যোগদানের পর থেকেই দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে শাহজাদপুর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস। যেখানে হেবার ঘোষনা পত্র দলিলের জন্য সরকারি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৪০ টাকা ও এনফি ২৪০ টাকা, সেখানে সরকারি ফি ব্যাতিত আলাদাভাবে প্রতিটি দলিলের জন্য সর্বনিম্ন উৎকোচ হিসেবে নেয়া হচ্ছে ১৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এসব টাকা আদায়ের জন্য অবৈধভাবে রাখা হয়েছে সুমন নামের জনৈক এক ব্যক্তিকে।
সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে সরেজমিনে গিয়ে এক ভুক্তভোগী কায়েমপুর ইউনিয়নের ব্রজবালা গ্রামের মোঃ মানিক বলেন, আমি একটি হেবার ঘোষনা পত্র দলিল রেজিষ্ট্রি করতে এলে প্রথম দিন আমাকে নানা অজুহাতে দলিল রেজিষ্ট্রি না পরে আবার আসতে বলেন। পরে সুমন আমাকে ২৫ হাজার টাকাসহ আসতে বলে, আমি পরবর্তীতে অতিরিক্ত ২৫ হাজার টাকা উৎকোচ প্রদান করায় রাজি হলে আমার দলিলটি রেজিষ্ট্রি করে দেন।
এ ব্যাপারে সুমনকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, স্যার আমাকে এখানে নকল নবিশ হিসেবে চাকরি দিয়েছে। গ্রাহকদের কাছ থেকে অবৈধ টাকা লেনদেনের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে স্যারের সাথে আপনারা কথা বলেন। অথচ ভিডিওতে তার টাকা লেনদেনের দৃশ্য ধরা পড়ে।
জানতে চাইলে সাব-রিজিস্ট্রার শুব্রত কুমার দাস জানান, আমি বা আমার অফিসে কোন প্রকার ঘুষ নেয়া হয় না। আপনারা যা শুনেছেন তা সঠিক নয়। সুমনের টাকা গ্রহণের ভিডিওটি দেখালে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।