বিরোধীদলীয় নেতা থাকাকালীন ১৯৯৪ সালে পাবনার ঈশ্বরদীতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনবহরে গুলি ও বোমা হামলার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত এক আসামির মৃত্যু হয়েছে। তার নাম হাকিম উদ্দিন ওরফে টেনু (৬০)।
তিনি ওই মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদি হিসেবে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। তিনি ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সদস্য।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। হাকিমের বাড়ি ঈশ্বরদীর পশ্চিম টেংড়ি বাবুপাড়া গ্রামে। বাবার নাম মহসিন আলী। বাড়িতে তার স্ত্রী ও তিন মেয়ে রয়েছেন।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন। জেলার বলেন, গত ১০ আগস্ট তিনি কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে দ্রুত রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর থেকে হাসপাতালের প্রিজন সেলে তার চিকিৎসা চলছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে তার মৃত্যু হয়। হাকিম দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগে ভুগছিলেন।
এর আগে তার ওপেন হার্ট সার্জারি করা ছিল বলেও জানান রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার।
জানতে চাইলে জেলার হাবিবুর রহমান বলেন, গত ৩ জুলাই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে হামলা মামলার রায় হয়।
পরে গত ৯ জুলাই কয়েদি হাকিমকে পাবনা কারাগার থেকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। সেই থেকে তিনি এখানেই বন্দি ছিলেন। মৃত্যুর পর তার মরদেহ রামেক হাসপাতারের মর্গে নেওয়া হয়েছে। দুপুরের মধ্যেই ময়নাতদন্ত শেষ করা হবে। এরপর তার মরদেহটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এর আগে গত ৩ জুলাই পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রুস্তম আলী চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন ও ১৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন।
এর আগে ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর খুলনা থেকে ট্রেনে ঈশ্বরদী হয়ে সৈয়দপুরের দলীয় কর্মসূচিতে যাচ্ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলের নেত্রী শেখ হাসিনা। তাকে বহনকারী ট্রেনটি (রূপসা এক্সপ্রেস) ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনে প্রবেশের মুহূর্তে ওই ট্রেন ও শেখ হাসিনার কামরা লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুর্বৃত্তরা।
স্টেশনে যাত্রাবিরতি করলে আবারও ট্রেনটিতে হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় পরবর্তীতে দলীয় কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করে শেখ হাসিনা দ্রুত ঈশ্বরদী ত্যাগ করেন। পরে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জিআরপি থানার ওই সময়কার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে তৎকালীন ছাত্রদল নেতা ও বর্তমানে ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুসহ সাতজনকে আসামি করে মামলা করেন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর পুলিশ মামলাটি পুনঃতদন্ত করে। তদন্ত শেষে নতুনভাবে স্থানীয় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীসহ ৫২ জনকে এ মামলার আসামি করা হয়।
এদিকে মামলা করার পর ওই বছর কোনো সাক্ষী না পেয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ। কিন্তু আদালত ওই প্রতিবেদন গ্রহণ না করে অধিকতর তদন্তের জন্য তা সিআইডিতে পাঠান। পরে তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করে সিআইডি। হাকিম উদ্দিন ওরফে টেনু ছাড়াও গত ২৫ বছরে এই মামলার ৫২ জন আসামির মধ্যে পাঁচজন মারা গেছেন।