বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মহিলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রশ্ন করেন। বিকেলে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিএনপির অভিযোগ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানার ঘটনার দিন সূর্য ওঠার আগেই খালেদা জিয়া বাসা থেকে বের হয়ে ২৪ ঘণ্টা নিখোঁজ ছিলেন। তিনি কোথায় ছিলেন? যিনি দুপুরের আগে ঘুম থেকে ওঠেন না, তিনি সূর্য ওঠার আগে বাসা থেকে বেরিয়ে ২৪ ঘণ্টা নিখোঁজ থাকলেন। এতে প্রমাণ হয়, এ ঘটনার জন্য তারা দায়ী। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সময় আপনার (মির্জা ফখরুল) নেত্রী কোথায় ছিলেন, এর জবাব কি দেবেন?
তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্ট- এ দু’টি হত্যাকাণ্ড একই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতা। ১৫ আগস্ট ষড়যন্ত্রের ‘প্রাইম টার্গেট’ ছিলেন বঙ্গবন্ধু আর ২১ আগস্টের ‘প্রাইম টার্গেট’ ছিলেন শেখ হাসিনা। ’৭১-এর পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল স্বাধীনতাবিরোধীরা। এর ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ২১ আগস্ট যখন গ্রেনেড হামলা হয়েছে, তখন ক্ষমতায় ছিল কারা?
সেতুমন্ত্রী বলেন, ২১ আগস্ট হত্যাকারীদের নেতা হরকাতুল জিহাদের মুফতি হান্নান জবানবন্দিতে বলেছে, হাওয়া ভবনের পরিকল্পনায় তারেক রহমানের নির্দেশে তারা হামলা করে। এ ঘটনার মাস্টারমাইন্ড তারেক রহমান- একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। এটা প্রচলিত আদালতে প্রমাণিত হয়েছে, জনতার আদালতে প্রমাণিত, ইতিহাসের আদালতেও প্রমাণিত হবে। এ ঘটনায় আপনারা (বিএনপি) যদি জড়িত না থাকেন, তাহলে এফবিআই’কে তদন্ত করতে বাধা দিলেন কেন? স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে তদন্ত করতে আসতে বাধা দিলেন কেন? জজ মিয়া নাটক সাজিয়েছিলেন কেন? ২২ আগস্ট সকালের আগে কেন সব আলামত নষ্ট করে দিলেন? হামলাকারীদের চোখের সামনে দিয়ে চলে যেতে দেওয়া হলো কেন? এর জবাব কি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেবেন?
কাদের বলেন, নবাব সিরাউদ্দৌলার সঙ্গে মীর জাফর বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। মীর জাফররা সব জায়গায় থাকে। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মোশতাক বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। এটা আওয়ামী লীগের জড়িত থাকার বিষয় না। সিরাজউদ্দৌলার সঙ্গে সেনাপতি ইয়ার লতিফ বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সেনাপতি জিয়াউর রহমান বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জিয়াউর রহমান যদি জড়িত না-ই থাকবেন, তাহলে খুনিদের বিদেশে নিরাপদে যেতে দিলেন কেন? তাদের দূতাবাসে চাকরি দিলেন কেন? পুরস্কৃত করলেন কেন? ফখরুল সাহেব, এর জবাব দিতে হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কে বন্ধ করেছিল? কে ইনডেমিনিটি দিয়েছিল? এটি সংবিধানে কে অন্তর্ভূক্ত করেছিল? এর জবাব আপনাদের দিতে হবে ফখরুল সাহেব। আজও এর জাবাব দেননি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, অনেকে বলেন, আমরা সংলাপ করি না। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করে ইনডেমিনিটি দিয়ে রাজনৈতিক দলের মধ্যে কর্মসম্পর্কের অলঙ্ঘিত দেওয়াল তৈরি করা হয়। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর সে দেওয়াল আরও উঁচু হয়েছে। সে দেওয়াল আমরা ভুলি কীভাবে? ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে আপনারা হত্যার পরিকল্পনা করে আওয়ামী লীগের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করেছেন। এতকিছুর পরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে খালেদা জিয়াকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। খালেদা জিয়া কি অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেছিলেন, সবাই জানে। এরপর, পুত্রহারা মাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু, মুখের সামনে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এটা করে আপনারা কর্মসম্পর্কের রাজনীতির দরজা চিরতরে বন্ধ করে দিয়েছেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুন। এতে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মেরিনা জাহান কবিতা, পারভীন জামান কল্পনা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদক মাহমুদা বেগম ক্রিক, মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী সাহিদা তারেক দিপ্তি, আসমা জেরিন ঝুমু, শেখ আনার কলি পুতুল, সুরাইয়া বেগম ইভা প্রমুখ।