জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া রংপুর-৩ আসনে প্রার্থিতায় চমক থাকতে পারে। এরশাদ পরিবারের ৪ সদস্যের পাশাপাশি দলের অন্তত তিনজন নেতা ওই আসনে নির্বাচন করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে কিছুটা বেকায়দায় পড়েছেন দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের। জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারছেন না তিনি। দলটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
দলটির একাধিক নেতার দেয়া তথ্য মতে, রংপুর-৩ আসন জাতীয় পার্টির সুপ্রিম কমান্ডের হাতেই থাকার কথা। তাই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমস্যা দেখা দিলে চমক হিসেবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের নিজেই এ আসনে প্রার্থী হতে পারেন। তিনি নিজে না হলে ওই আসনে তার ভাই আমেরিকা প্রবাসী ড. হুসেইন মুর্শেদ প্রার্থী হতে পারেন। সেক্ষেত্রে জিএম কাদেরর লালমনিরহাট-৩ আসনে দেখা যেতে পারে অন্য কাউকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির এক যুগ্ম মহাসচিব জানান, রংপুর-৩ আসনের মনোনয়ন নিয়ে বিরোধ থেকেই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে অস্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছিলেন দলটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ। গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও বেগম রওশন এরশাদ বিভিন্ন ইস্যুতে নিজেদের মধ্যে দর কষাকষি করতেই এ সব বিষয়গুলোকে অমীমাংসিত রাখতে চান।
জাতীয় পার্টির ওই প্রেসিডিয়াম সদস্য আরও জানান, গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে মানতে বেগম রওশন এরশাদের কোনো আপত্তি নেই, যদি তাকে বিরোধী দলীয় নেতা করা হয়। তাই গোলাম মোহাম্মদ কাদের এ ইস্যুকে কেন্দ্র করেই বাকিগুলো নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান।
জানা গেছে, রংপুর-৩ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছোট ভাইয়ের ছেলে সাবেক সংসদ সদস্য আসিফ শাহরিয়ার। দলীয় মনোনয়ন না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি ওই আসনে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানা গেছে।
এ ছাড়া এরশাদ পরিবারের অন্যতম সদস্য হিসেবে মনোনয়ন প্রত্যাশী তার মামাতো ভাইয়ের ছেলে মেজর (অব.) খালেদ আখতার। তিনি দীর্ঘদিন চাচা এরশাদের একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মনোনয়ন প্রত্যাশী এরশাদের বোন সাবেক সংসদ সদস্য মেরিনা রহমানের মেয়ে মেহেজেবুন্নেছা রহমান টুম্পাও। তিনি জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর স্ত্রী।
জাতীয় পার্টি সূত্রে আরও জানা গেছে, রংপুর-৩ আসনে মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন এরশাদ-রওশন দম্পতির সন্তান রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদ। আর এতেই ঘটেছে বিপত্তি। মা রওশন এরশাদ বাবার আসনে সাদকে মনোনয়ন দেয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
জাতীয় পার্টির বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, রংপুর-৩ আসনে দলীয় মনোনয়নের অন্যতম দাবিদার জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম ফখর-উজ-জামান। তিনি দীর্ঘদিন জাতীয় পার্টির সঙ্গে আছেন এবং শিল্পপতি হওয়ার সুবাদে বিভিন্ন কর্মসূচিতে মোটা অঙ্কের অনুদান দিয়ে থাকেন। শিল্পপতি এস এম ফখর-উজ-জামান এরশাদের বাবা মকবুল হোসেন ট্রাস্টের অন্যতম ট্রাস্টি।
জানা গেছে, রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির ওই আসনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী। রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা এস এম ইয়াসিরকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন। তার পক্ষে জাতীয় পার্টির শীর্ষ দুই পদধারী নেতার একজনের সমর্থন থাকলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় শক্ত অবস্থান নিতে পারছেন না ওই নেতা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির প্রভাবশালী একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্যারের আসনে ম্যাডাম চাইছেন সাদ এরশাদকে। ওই আসনে আরও প্রার্থী থাকলেও ম্যাডামের সামনে কেউ মুখ ফুটে বলতে পারছেন না। আমার মনে হয়, ম্যাডাম বিরোধীদলীয় নেতা হয়ে গেলে ওই আসনে সাদ এরশাদই মনোনয়ন পাবেন।’
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আলমগীর সিকদার লোটন জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্যারের আসনে কে মনোনয়ন পাবেন সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ। এ বিষয়ে আমাদের কোনো কিছু বলার ক্ষমতা নেই।’
রংপুর-৩ আসনে জাতীয় পার্টি কাকে মনোনয়ন দিচ্ছে জানতে চাইলে দলটির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের এখনও কোনো সিদ্ধান্ত বা অফিশিয়াল আলোচনা হয়নি। তবে আমরা স্থানীয় নেতাদের কাছ থেকে ৪ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম চেয়ে পাঠাব। পরে দলের প্রেসিডিয়াম অথবা পার্লামেন্টারি পার্টির সভায় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।’
প্রসঙ্গত, গত ১৪ জুলাই রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি রক্তে সংক্রমণসহ লিভার জটিলতায় ভুগছিলেন।
এরশাদের মৃত্যুর পর গত ১৬ জুলাই শূন্য ঘোষণা করা হয় জাতীয় সংসদের রংপুর-৩ আসন। শূন্য ঘোষিত এ আসনে আগামী তিন মাসের মধ্যে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংবিধান অনুযায়ী কোনও সংসদীয় আসন শূন্য ঘোষণা করা হলে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাকতা রয়েছে।