চাঁ’দাবা’জি, দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সবার আমলনামা এখন তার কাছে। শুধু বিতর্কিত কেন্দ্রীয় নেতারাই নন, ব্যবস্থা নেয়া হবে মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধেও।এক সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার গণভবনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তিন বছরে মাত্র একটি জেলায় সম্মেলন হওয়ায় কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি চরম ক্ষু’ব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘এই মেয়াদে মাত্র একটি জেলায় সম্মেলন হলো কেন? বাকিগুলো কেন হলো না? আপনারা করেন কী? কে কী করেন
সবার আমলনামা কিন্তু আমা’র কাছে রয়েছে। জেলায় জেলায় গিয়ে খাওয়াদাওয়া করে আসেন, দলের কাজ তো কেউ করেন না। ব্যক্তি অপ’কর্মের দায় দল ও সরকার নেবে না। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ জাতীয় সম্মেলনের আগে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোয় একটা গুণগত পরিবর্তন আনতে কঠোর অবস্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অনৈ’তিক অভিযোগের বিরুদ্ধে তার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির অংশ হিসেবে ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই পদ থেকে শোভন-রাব্বানীকে সরিয়ে দেওয়া
হয়েছে।একই সঙ্গে যুবলীগকেও শেষ বারের মতো সাবধান করে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় যুবলীগের ট্রাইব্যুনাল চাঁদাবাজদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছে। এদিকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্সনীতি বাস্তবায়ন শুরু হওয়ায় দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত বিতর্কিত নেতাকর্মীদের মধ্যে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বিতর্কিত মন্ত্রী-এমপিসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও। এদিকে তিন বছরে এখন পর্যন্ত মাত্র একটি সাংগঠনিক জেলায় সম্মেলন হয়েছে। ২০১৭ সালের ২৮ অক্টোবর মৌলভীবাজার জেলার সম্মেলন হয়। বাকি
৭৭টি সাংগঠনিক জেলা কমিটিই এখন মেয়াদোত্তীর্ণ। এসব জেলায় সম্মেলনের জন্য সময় রয়েছে মাত্র তিন মাস। এখনো পর্যন্ত সম্মেলনের তারিখই ঘোষণা করা হয়নি। গত রবিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি এক বিবৃতিতে দলের সাংগঠনিক জেলা/ মহানগর /উপজেলা/ থানা/ পৌর/ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড-এর সব মেয়াদোত্তীর্ণ শাখার সম্মেলন আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।শনিবারের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ফাইল বের করে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয়
সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীমের কাছে জানতে চান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সম্মেলন কবে হয়েছে? উল্লেখ্য, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর। এছাড়া ১৭ বছর সম্মেলন হয় না নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের। ১৩ বছর সম্মেলন হয় না চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলায়। এছাড়া তিন বছর মেয়াদি কমিটি সাত/আট বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ রয়েছে অনেক জেলায়।উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী হওয়া সারাদেশে দলের ১৭৭ নেতার কাছে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের নামে চিঠি গেছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাদের চিঠির জবাব দিতে হবে। চিঠির জবাব পাওয়ার পর প্রতিটি
উপজেলার বি’ষয়গুলো বিস্তারিত বিশ্লেষণের পর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা চিঠির জবাব দেবেন না, তাদের সরাসরি দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। জানা গেছে, বিদ্রোহীদের জবাবের তথ্য বিশ্লেষণ করে যদি কোনো কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী-এমপির সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কেবল ছাত্রলীগ-যুবলীগ নয়, আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ ও তার প্রমাণ দলীয় হাইকমান্ডের কাছে আছে। কাউকে ছাড়বেন না তিনি। শুধু সাংগঠনিক ব্যবস্থা নয়, আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। তৃণমূলে যাদের নামে চাঁ’দাবা’জির অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দলেও জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। দুর্নীতিবাজ-চাঁদাবাজদের ম’দত না দিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। নেতাকর্মীদের কাছে আরো দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করছেন তিনি। রাজনীতির নামে কোনো রকম বিশৃঙ্খলা, চাঁ’দাবা’জি, পেশিশক্তি প্রয়োগ ইত্যাদির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছেন শেখ হাসিনা।