প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একজন রাজনৈতিক নেতা হতে হলে সবার আগে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার কথা চিন্তা করতে হবে। মনে রাখবেন নেতা হওয়ার আগে মানুষ হতে হবে।
নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় শনিবার বিকেলে ম্যানহাটনের ম্যারিয়ট মারকুইজ হোটেলে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের আয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে দেওয়া এক নাগরিক সংবর্ধনায় তিনি এসব বলেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি অর্জনের জন্য তার যাত্রা শুরু করেছিলেন যে অর্থনৈতিক আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন, জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন, অর্থনৈতিকভাবে দেশকে স্বাবলম্বী করার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়ার যে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সেগুলো যদি বাস্তবায়ন করতে পারতেন তাহলে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ১০ বছরের মধ্যে বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অসৎ ব্যক্তিদের প্রভাবের কারণে যারা সৎভাবে জীবনযাপন করতে চান, তাদের জীবনযাপনও কঠিন হয়ে পড়েছে। সৎ লোকদের সন্তানদের মনে স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন জাগে, তাদের পরিবার কেন অন্যদের মতো বিলাসবহুল জীবনযাপন করতে পারে না? অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করা পরিবারের সন্তানদের মতো লাইফস্টাইল তারাও কেন পায় না? স্বভাবতই এমন চিন্তাভাবনা মানুষকে অসৎ পথে চালিত করে।
সভায় দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা অব্যাহত রাখারও ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মাদকবিরোধী অভিযানও অব্যাহত থাকবে। কেননা এটি একটি পরিবার ও দেশকে ধ্বংস করে। আমরা মাদকের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করব।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছি। আমি পরিষ্কারভাবে একটা কথা বলতে চাই, কেউ যদি অসৎ পথে অর্থ উপার্জন করে এবং তার অনিয়ম, অসততা ধরা পড়ে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। তারা যে-ই হোক না কেন, এমনকি আমার নিজ দলের লোক হলেও।
শেখ হাসিনা বলেন, অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জনকারী ব্যক্তিরা যখন সমাজকে পঙ্গু করে, তখন জনগণকে তাদের সন্তানদের নিয়ে সৎ জীবনযাপন করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, যারা সৎ জীবনযাপন করতে চান, তাদের কিছু সীমাবদ্ধতা নিয়ে চলতে হয়। কিন্তু যারা অসৎ উপায়ে অর্জিত অর্থের মাধ্যমে বিলাসবহুল জীবনযাপন করে, তাদের মাধ্যমেই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়।
উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়মের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ব্যাপক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এসব প্রকল্পের প্রতিটি টাকা যথাযথভাবে ব্যয় করা হলে বাংলাদেশ আরও উন্নত হতে পারতো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি একটি বিষয় অনুসন্ধানের জন্য বলেছিলেন। বিষয়টি হচ্ছে কার উপার্জন কী এবং তারা কীভাবে জীবনযাপন করে। আমার এটি খুঁজে বের করতে হবে যেন এই বিপদ ও নোংরা প্রতিযোগিতা থেকে আমাদের সমাজ ও নতুন প্রজন্মকে রক্ষা করতে পারি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদের নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আট বছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ফলে এবার মঞ্চে আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকে বসতে দেওয়া হয়নি।
প্রতি বছর প্রধানমন্ত্রীর সাথে মঞ্চে সাধারণ নেতাকর্মীদের বসার সুযোগ করে দিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিতেন ড. সিদ্দিকুর রহমান ও আব্দুস সামাদ আজাদ। গত বছর প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা চলাকালীন সাধারণ নেতাকর্মীরা ‘নো মোর সিদ্দিক’ বলে স্লোগানে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
নেতাকর্মীদের প্রচণ্ড চাপের মুখে প্রতি বছরের প্রথা ভেঙে এবার সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদের মঞ্চে না ওঠানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন নিউইয়র্কের সচেতন রাজনীতিবিদরা। দলীয় কোন্দল মেটাতে আগামী দু-একদিনের মধ্যেই নতুন কমিটির নাম ঘোষণা করা হতে পারে বলে অনেকেই ধারণা করছেন।