দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের মান-মর্যাদা ক্ষুন্ন করা, অনিয়মসহ নানা অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান, ডাকসুর ভিপি ও জিএসসহ ছয়জনকে পদত্যাগ করার জন্য উকিল নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা না গ্রহণ না করলেপরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
পদত্যাগ করতে বলা ছয়জন হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি (প্রশাসন), প্রো-ভিসি (একাডেমিক), ডাকসুর ভিপি ও জিএস এবং রেজিস্ট্রার। রাজধানীর শের-ই-বাংলানগর এলাকার বাসিন্দা মাহবুবুল আলমের পক্ষে সুপ্রীম কোর্টের অ্যাডভোকেট মাহাবুবুল আলম (দুলাল) নোটিশটি প্রেরণ করেছেন।
এছাড়া ইউজিসির চেয়ারম্যান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান, শিক্ষামন্ত্রী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটি বা প্রেসক্লাবের (সাংবাদিক সমিতি) সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ (জাসদ), জাতীয় ছাত্র সমাজ ও ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক বরাবর এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
নোটিশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংগ্রাম, সাফল্য ও গৌরবের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ভিসির ব্যর্থতা, অদক্ষতা, দায়িত্বহীনতা, অপারগতা, অসাধুতা সর্বোপরি সীমাহীন ও ক্ষমাহীন ব্যর্থতার কারণে এশিয়ার ৪০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংয়ের তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোন স্থান পায়নি। বিশ্বজনীন জরিপেও এক হাজারের কোন মর্যাদা পায়নি। ভিসির ব্যর্থতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার মান-মর্যাদা হারিয়েছে।
আরও বলা হয়েছে, মূল নোটিশ গ্রহীতাগণ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করে এবং ভর্তি প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে ডাকুস নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে এবং নির্বাচত করতঃ অবৈধভাবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দিয়ে এদেশের উচ্চশিক্ষার প্রধান পাদপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মান-মর্যাদা নষ্ট করেছে। দেশের নাগরিক, সাবেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক হিসেবে নোটিশদাতার মান-মর্যাদাসহ শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি জনআস্থা ধ্বংস করে দেশের অপূরণীয় ক্ষতিসাধন করেছেন।
এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রোভিসি ও ডাকসুর জিএস এবং রেজিস্ট্রারকে সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয়েছে। এছাড়া ভিপির বিরুদ্ধেও দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগ তোলা হয়েছে। নোটিশে বলা হয়েছে, ভর্তি পরীক্ষা প্রক্রিয়া না মেনে নিয়ম ও আইন লংঘন করে নিজেরাই অন্যায় ও অপরাধমূলক আচরণ দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয়কে কলুষিত করেছেন। এছাড়া ডাকসু জিএস গোলাম রাব্বানীর নৈতিক স্খলনজনিত কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়কেও নজিরবিহীন দুর্নীতি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড দ্বারা কলুষিত করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এসব কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি (প্রশাসন), প্রো-ভিসি (একাডেমিক), ডাকসুর ভিপি ও জিএস এবং রেজিস্ট্রারকে স্ব-স্ব পদ থেকে পদত্যাগের অনুরোধ জানানো হয়েছে। নোটিশ পাওয়ার তিনদিনের মধ্যে জবাব দেওয়ার অনুরোধ করা হয়।
অন্যথায় নোটিশ দাতা প্রচলিত রীতি-নীতি, মূল্যবোধ, বিশ্বাস ও আইন-কানুন অনুসরণে যথাবিহীত পরবর্তী সকল সম্ভাব্য কার্যক্রম গ্রহণ করতে বাধ্য হবেন বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। তার জন্য ওই ছয়জনকে সকল দায় ও পরিণতি গ্রহণ করতে হবে।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর নোটিশটি পাঠিয়ে তিনদিনের মধ্যে জবাব দিতে হয়। এ বিষয়ে জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন উপদেষ্টার দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী রেজিস্ট্রার আ. হামিদ হালদারকে বার বার ফোন দেওয়ার হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এছাড়া নোটিশটি না পেলেও এর কথা শুনেছেন জানিয়ে ডাকসুর সহ সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর নতুন টিভিকে কে বলেন, ‘নোটিশের বক্তব্যগুলো নতুন কিছু নয়। সব বিশ্ববিদ্যালয়েই এখন এমন ধরণের অনিয়ম, দুর্নীতি চলছে। আমি আমার জায়গা থেকে চেষ্টা করেছি কাজ করার। কিন্তু নানা বাধার কারণে সম্ভব হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমি যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত। সেজন্য আমার ওপরও দায় বর্তায়। নোটিশটি পেলে আইনগত যেসব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, তা গ্রহণ করব।’