ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের বিষয়ে অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নাজমুলের অর্থপাচার ও দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহ তা যাচাই-বাছাই করছে সংস্থাটি।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বিষয়টি জানিয়েছেন সংস্থাটির সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত্।
দুদকের সচিব বলেন, গণমাধ্যমে দুর্নীতি সংক্রান্ত যেকোনো তথ্যই কমিশন গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে। এ বিষয়েও কমিশন যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেবে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, লন্ডনে চারটি কোম্পানি খুলে ব্যবসা করছেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম। এসব প্রতিষ্ঠানে শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন তিনি। ক্যাসিনোসহ ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের অনেকের সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে। বিনিয়োগকারী ভিসায় গিয়ে নাজমুল এখন বিলেতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। অনুসন্ধানে নাজমুলের নামে ব্রিটেনের কোম্পানি হাউজে আবাসন, গাড়ির অ্যাক্সিডেন্ট ক্লেইম ম্যানেজমেন্ট, পণ্যের পাইকারি ব্যবসা, বিজ্ঞাপন, চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান, সেবা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ধরনের ছয়টি কোম্পানির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দুটি কোম্পানির পরিচালক পদে তার নাম নেই। বাকি চারটি কোম্পানির মধ্যে একটির একক পরিচালক এবং তিনটি কোম্পানির যৌথ পরিচালক হিসেবে আছেন নাজমুল।
২০১১ সালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি হন এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক হন সিদ্দিকী নাজমুল আলম।
বর্তমানে নাজমুল আলম বিনিয়োগকারী ভিসায় যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। ব্রিটিশ সরকারের আইন অনুযায়ী, এই ভিসা পেতে ন্যূনতম ২ লাখ পাউন্ড (বাংলাদেশি টাকায় ২ কোটির বেশি) বিনিয়োগ করতে হয়। ফ্লেক্সফগ লিমিটেড, এলিট সিটি লিমিটেড, নাজ ইউকেবিডি প্রোপার্টিজ লিমিটেড, এসএনবি অটোস লিমিটেড, এসএনআর ইউকে বিডি লিমিটেড ও কার মিউজিয়াম লিমিটেড নামে ছয়টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নাজমুল যুক্ত আছেন। এর মধ্যে ইস্ট লন্ডনের কেনন স্ট্রিট রোডে নাজ ইউকেবিডি প্রোপার্টিজ নামের আবাসন ব্যবসার একক পরিচালক তিনি। যার মূলধন দেখানো হয়েছে সাড়ে ৮ লাখ পাউন্ড, বাংলাদেশি টাকায় যা ১০ কোটির সমান। কোম্পানিটি ২০১৮ সালের ১০ জুলাই নিবন্ধিত হয়। টাওয়ার হ্যামলেটসের বেথনাল গ্রিন রোডের পাশে পান্ডারসন গার্ডেনে রয়েছে ফ্লেক্সফগ লিমিটেড নামের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, যেটি ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি কোম্পানি নিবন্ধন করা হয়। ব্যবসার ধরন দেখানো হয়েছে নন-স্পেশালাইজড হোলসেল ট্রেড, অ্যাডভারটাইজিং এজেন্সি এবং অন্যান্য তথ্যপ্রযুক্তি সেবা।
তৃতীয় কোম্পানি এলিট সিটি লিমিটেড। এটি সেন্ট্রাল লন্ডনের বসওয়েল স্ট্রিটে অবস্থিত। এই কোম্পানি ২০১৮ সালের ১৬ আগস্ট নিবন্ধিত হয়।
চতুর্থ কোম্পানি এসএনবি অটোস লিমিটেড বেথনাল গ্রিনের ২৫ পান্ডারসন গার্ডেনে অবস্থিত। এই প্রতিষ্ঠান ২০১৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর নিবন্ধিত হয়। এই কোম্পানির ব্যবসার ধরন হিসেবে বলা হয়েছে- রেন্টিং অ্যান্ড লিজিং অব কারস অ্যান্ড লাইট মোটর ভেহিক্যাল। শুরু থেকে এই প্রতিষ্ঠানেরও পরিচালক হিসেবে আছেন নাজমুল আলম ও মোহাম্মদ রুহুল আমিন।
এছাড়া, এসএনআর ইউকে বিডি লিমিটেডে ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর নাজমুল পরিচালক হিসেবে যোগ দিলেও ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি তিনি পদত্যাগ করেন। একইভাবে কার মিউজিয়াম লিমিটেডে ২০১৬ সালের ২৮ জুন পরিচালক পদে যোগ দিয়ে তিন দিনের মাথায় ২০১৬ সালের ১ জুলাই পদত্যাগ করেন তিনি।
এ বিষয়ে সিদ্দিকী নাজমুল আলম ফেসবুকে দেয়া একটি স্ট্যাটাসে লন্ডনে তার কোনো কোম্পানি নেই বলে চ্যালেঞ্জ করেছেন। স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, লন্ডনে একটা কোম্পানি খুলতে খরচ হয় ১২ পাউন্ড। চারটি কোম্পানি খুলতে খরচ হয়েছে ৪৮ পাউন্ড, বাংলা টাকায় প্রায় ৪৯০০ টাকা, যা সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স খোলার চাইতেও কম। আর অপরিশোধিত মূলধন হিসেবে চাইলে আপনি যা ইচ্ছা দেখাতে পারবেন। তার পরেও আমার কোনো কোম্পানির অপরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৫/৭ হাজার পাউন্ডের বেশি নয়; অথচ কি কাল্পনিক নিউজ?
তিনি বলেন, চাইলে যে কেউ যুক্তরাজ্যে কোম্পানি খুলতে পারে, জাস্ট ২০ মিনিট সময় লাগে অনলাইনে। আমার কোম্পানিগুলোর নাম তো সবাই পেলেন এখন Companyhouse.gov.uk-এ গিয়ে দেখলেই বুঝবেন, সংবাদের সত্যতা কতটুকু।