সবকিছুতেই বিএনপি এবং তারেক রহমানকে জড়িয়ে ক্ষমতাসীনরা কথা বলছে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, তাদের কথাবার্তায় মনে হয় পুরো দেশটাই তারেক রহমানে ভরে গেছে। দেশ থেকে ক্ষমতাসীনরা নাই হয়ে গেছে। বুধবার (২ অক্টোবর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা আগেই বলেছিলাম, দুর্নীতির নামে কথিত অভিযান সম্পূর্ণ রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যমূলক। ফলে গত ১৩ বছরে আওয়ামী লীগের ঝুঁড়ি থেকে মহাদুর্নীতির বাতাসা নয় বরং যখন বড় বড় চমচম বের হতে শুরু করেছে তখন সেটির দায় চাপানোর জন্য তারা লন্ডনের রাস্তা খুঁজে বেড়াচ্ছে। খোদ রাজধানীতে গত ১৩ বছর যাবত ডজন ডজন ক্যাসিনো গড়েছে যুবলীগ ও তাদের গডফাদাররা, এই সরকারের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে দুর্বৃত্তরা টাকার কুমির হয়েছে। আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির বৃত্তান্ত শুনে দেশবাসী অত্যুগ্র বিস্ময়ে হতবাক হয়েছে। দুর্নীতির ইতিহাসে এ এক স্বতন্ত্র ও ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত। সেলিম প্রধান, খালেদ ভূঁইয়া, শামীম, ফিরোজরা সরকারে থাকা তাদের গডফাদারদের ইচ্ছাতেই টাকা পাচার করেছে। গডফাদার পৃষ্ঠপোষকদের কাছ থেকেই তারা দীক্ষা পেয়েছে। দুর্নীতি, অনাচার, আর অনিয়মে গা ভাসিয়ে দিয়েছে। ফলে দুই একটা ছোট মাছ ধরে এই সরকারের রোগ সারানো সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ক্যালকুলেটেড এই অভিযানেও টাকার স্তুপের যে ছবি দেখা গেছে তা এই মধ্যরাতের নির্বাচনের সরকারের আসল প্রতিচ্ছবি। সুতরাং নিরপেক্ষ ও সুবিস্তৃত অভিযানে কত মনিমানিক্য ও স্বর্ণখনি পাওয়া যেতো তা সহজেই অনুমান করা যায়। এতদিন র্যাব-পুলিশ-দুদক ‘সচেতন উদাসীনতায়’ এইসব দুর্বৃত্তদের ধরেনি। কেন ধরেনি? কারণ সর্ষের মধ্যেই ভূত রয়েছে।
রিজভী বলেন, দুর্নীতি ও ক্যাসিনো বিরোধী তথাকথিত অভিযানের অন্যতম লক্ষ্য বিএনপি এবং তারেক রহমান। সেটাই আওয়ামী মন্ত্রী-নেতারা ব্রিফিংয়ে স্পষ্ট করলো। আওয়ামী লীগ অসততা ও নীতিপঙ্গুত্বতায় ভুগছে বলেই নিজেদের কালিমা অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে আত্মতৃপ্তি লাভ করতে চাচ্ছে। এখন আওয়ামী লীগের কতিপয় দলদাস পত্রিকা ও মিডিয়া তারেক রহমানকে ক্যাসিনোর সাথে যুক্ত করতে কাছা মেরে সপ্তসুরে প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে।
একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী পত্রিকার রিপোর্ট উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি পড়লে মনে হবে তারা সরকারের মিথ্যা হাইপার-প্রপাগান্ডার মুখপাত্রে পরিণত হয়েছে। সুনির্দিষ্ট সূত্র ও বিশ্বাসযাগ্য তথ্য ছাড়া মনের মাধুরি মিশিয়ে তারা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আষাঢ়ে গল্প ফেঁদে লিখছে-তিনি নাকি ক্যাসিনো বাণিজ্যের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করেন। মন্ত্রী, আমলা এবং ব্যবসায়ীদের বাধ্যতামূলকভাবে নাকি সেখানে গিয়ে ক্যাসিনো খেলে হারতে হতো। অথচ চারদিন আগেই ওই পত্রিকায় লেখা হয়েছে-আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯-২০১৯ সালে বাংলাদেশে ক্যাসিনোর সূচনা ঘটে। তখন ক্যাসিনো আমদানী করেছে যুবলীগের স¤্রাটসহ অন্যান্য নেতারা। তারাই প্রথমে বিভিন্ন ক্লাব ও পরে সারাদেশে এই ক্যাসিনো কালচার ছড়িয়েছে। তার আগে ক্যাসিনো সম্পর্কে কোন ধারনা ছিল না এদেশের মানুষের। আবার ঐ পত্রিকায়-আটক হওয়া সেলিম প্রধান নাকি ঐ সময় তারেক রহমানের আস্থাভাজনসহ নানা অশ্রাব্য কথা লিখা হয়েছে।
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের ধিক্কার জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, এই নির্জলা মনগড়া চটি লেখক দলদাসদের মিথ্যাচার। এদের আত্মা মৃত। কারা সিন্ডিকেট করে এসব কুৎসিত অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে সেটি আমরা জানি। আমরা সময় মতো সব উন্মোচন করবো। তাদেরও একদিন জবাবদিহি করতে হবে।
গণমাধ্যমের প্রতি প্রশ্ন রেখে রিজভী বলেন, যারা এই ১৩ বছর ধরে প্রাসাদ-মনিমুক্তা-ধনসম্পদ-জাঁকজমক-ঐশ্বর্য এবং উৎসব পর্বে মন্ত্রী-এমপি-ক্ষমতাসীন নেতাদের অংশগ্রহণ দেখার পরেও হাতের কলমটি এক ইঞ্চিও সরে না কেন? জন্মদিন-মৃত্যুবার্ষিকীর উৎসব দেখলেই মনে হয়-দুর্নীতির অর্জিত আয় থেকেই এসবের খরচ মেটানো হয়। প্রাসাদের বাহিরে রঙিন পোস্টার ও ঝাড়বাতির রোশনায়ে তা প্রমাণিত। আর ভেতরের সোনার খনি-টাকার খনির এক ঝলক মানুষ দেখতে পাচ্ছে এই রহস্যজনক অভিযানের, আর তাতেই উন্মার্গগামী হয়ে পড়েছে আওয়ামী মন্তী-নেতা-সাংবাদিকদের সিন্ডিকেট। তাই বিএনপি’র বিরুদ্ধে তাদের অকপট মিথ্যা অপপ্রচারের ঝোঁক আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, যাদেরকে এ পর্যন্ত আটক করা হয়েছে সবাই নাকি এক দশক আগে ছিলেন বিএনপির লোক। সেই সময় তারা কি করেছে সেই কেত্তন চলছে দলদাস মিডিয়াগুলোতে। গত বারো বছর তারা যে আওয়ামী লীগের গডফাদারের মাধ্যমে হরিলুট করেছে তার কাহিনী কই? সেগুলো বলতে-লিখতে কি শরম করে? আর এখন জনগণের টাকায় পরিচালিত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও নামানো হয়েছে বিএনপি ও তারেক রহমানের চরিত্র হননের অপপ্রচারণায়।
ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, একটি পত্রিকা লিখেছে, গোয়েন্দা সংস্থার কাছে জিজ্ঞাসাবাদে জি কে শামীম বলেছেন যে, আওয়ামী লীগের বর্তমান ও সাবেক ৭ মন্ত্রী এবং ২৩ এমপি-কে তিনি নিয়মিত টাকা দিতেন। তারা ছিল যুবলীগ নেতা শামীমের ‘বিজনেস পার্টনার’। আমাদের প্রশ্ন তারা কারা? নাম বলেন না কেন?
ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান বড় কোন অপকর্মের পূর্বাভাস কিনা সে প্রশ্ন রেখে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, গত ১৩ বছর ধরে মেগাদুর্নীতি, দখল ও চাঁদাবাজীর উৎসব পর্বে হঠাৎ সরকারের বিবেক জাগরিত হলো কি করে? এই বিস্ময়কর প্রশ্ন মানুষের মুখে মুখে। দুর্নীতি-চাঁদাবাজী ও ক্যাসিনো কাÐের ধারাবাহিকতায় এই বাঁক কি কোন মেগালুটের ভান্ডারকে ঢেকে ফেলা কি না সেটিও এখন প্রশ্নবোধক চিহ্ন। এই চরিত্র বদল যে একটা বড় ধাপ্পাবাজি প্রতিমূহুর্তে সেটির প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। রাঘব বোয়ালরা কোথায়?
তিনি বলেন, ’ক্যাসিনো কাÐে’ আলোচিত সমালোচিত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি গ্রেফতার করা হবে কি না, তা নিয়ে দোটানায় রয়েছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ক্যাসিনো স¤্রাটের সুবিধাভোগীদের তালিকায় মন্ত্রী, এমপি, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক ব্যক্তিই আছেন। প্রধানমন্ত্রী বললেন, আইন তার নিজের গতিতেই চলবে। তাহলে কোন অপরাধীকে ধরার জন্য জাল ফেলে গ্রীন সিগনাল এর অপেক্ষা করতে হয় কেন? আসল কথা হলো-সরকার কথিত অভিযানের নামে মাঠে নেমে এখন না পারছে উঠে আসতে না পারছে রাঘব বোয়াল ধরতে। তাই এখন বিএনপি ও তারেক রহমানের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নুল আবদীন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রমূখ।