ক্যাসিনো কেলেঙ্কারি নিয়ে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী সময়ে হাওয়া ভবন থেকে পাঁচটি ক্যাসিনো উপকরণ উদ্ধার হয়েছিল। বর্তমানে বিদেশি নাগরিকদের পাশাপাশি দেশের গডফাদারদেরও রয়েছে ক্যাসিনোর সঙ্গে সম্পৃক্ততা। সাবেক তিন মন্ত্রী, একটি সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র ও ৫ জন এমপি ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে জড়িত। এমন খবর দৈনিক ইত্তেফাকের।
এমন ভয়ঙ্কর তথ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে এসেছে। এদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা জরুরি হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সবাই তাকিয়ে আছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের দিকে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে যোগদান শেষে প্রধানমন্ত্রী গতকাল মঙ্গলবার সকালে দেশে ফিরেছেন। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতারা তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে এক পর্যায়ে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে জড়িত এক নেতার নাম উল্লেখ না করে বলেন, সে এখনো গ্রেফতার হয়নি? দেশের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে স্থানীয় সময় রবিবার রাতে নিউ ইয়র্কস্থ জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি দেশে শুরু হওয়া দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলেন, সামগ্রিক স্বার্থেই সমাজে বৈষম্যের জায়গাটিতে এ ধরনের আঘাতের প্রয়োজন ছিল। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চলছে এবং চলবে। এতে কেউ অখুশি হলেও কিছু করার নেই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০১ সালে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিএনপি যখন ক্ষমতায় আসে, তখনই দেশে শুরু হয়েছিল ক্যাসিনো বাণিজ্যের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ। হাওয়া ভবনের দোতলায় তারেক রহমানের চেম্বারের পাশেই ছিল ক্যাসিনো। সেখানে রাউন্ড বোর্ডসহ একাধিক ক্যাসিনো সামগ্রী ছিল। ওয়ান ইলেভেনে যৌথ বাহিনীর অভিযানে এসব ক্যাসিনো বা জুয়ার সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছিল। সেসময় গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, হাওয়া ভবনের এই ক্যাসিনোটি পরিচালনা করতেন তারেক জিয়ার বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুন। মন্ত্রী, আমলা এবং ব্যবসায়ীদের বাধ্যতামূলকভাবে সেখানে যেতে হতো। তবে এখন মতিঝিল বা বনানীর ক্যাসিনোগুলোতে জেতা এবং হারা দুটোই হয়। কিন্তু এই হাওয়া ভবনের ক্যাসিনোগুলোতে জয়ের কোনো সম্ভাবনা ছিল না। বরং ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, আমলা, মন্ত্রীরা সেখানে যেতেন হারার জন্য। কোটি কোটি টাকা হেরে তারা নিজেদেরকে ধন্য করতেন।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়। এর এক দিন পর ২০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী কী নির্দেশনা দেন সেটি জানার আগ্রহ অনেকের। রাঘববোয়ালদের ভাগ্য নির্ভর করছে হাইকমান্ডের ওপর। এদিকে বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা, সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, মহিলা নেত্রী, সচিব, বিভিন্ন প্রকল্পের পিডি, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, অভিনয় জগতের মানুষ সবার নিয়মিত যাতায়াত ছিল বিভিন্ন ক্লাবের ক্যাসিনোতে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাতায়াতকারীদের ভিডিও ফুটেজও জমা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন নেতা বলেন, অভিযানের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ও একক সিদ্ধান্তে চলমান রয়েছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, এই অভিযান শুধু ঢাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। সুনামগঞ্জ থেকে সুন্দরবন, কুতুবদিয়া থেকে তেঁতুলিয়া যেখানে যত দুর্নীতি টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, মাদককারবারি আছে, সেখানে অভিযান চলবে। তাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অ্যাকশন শুরু হয়েছে।
অভিযানের প্রতি সমর্থন রয়েছে বেশির ভাগ মানুষের। এই অভিযান কত দূর যায়, সেদিকে নজর রাখছেন সাধারণ মানুষ। মাদক ও ক্যাসিনো বিরোধী যে অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, তাতে আটকরা ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের মধ্যম সারির নেতা। চলমান অভিযানে দুর্নীতিগ্রস্ত কিছু নেতা ক্ষুব্ধ হলেও সাধারণ মানুষের কাছে তা প্রশংসিত হয়েছে। জনগণের সামনে এসেছে কিছু মানুষের দুর্নীতির চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।