আদালতে ধমাকালেন যুবলীগ নেতা জি কে শামীম

যুবলীগ নেতা পরিচয় দেওয়া প্রভাবশালী ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমকে ৯ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। গতকাল বুধবার অস্ত্র ও অর্থ পাচার মামলায় তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের চাওয়া মোট ১৪ দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে মামলা দুটিতে যথাক্রমে ৪ ও ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এর আগে গত ২১ সেপ্টেম্বর শামীমকে অস্ত্র ও মাদক মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল।

এদিকে গতকাল আদালতে নেওয়ার পরে বিচিত্র মেজাজে দেখা যায় জি কে শামীমকে। ওকালতনামায় সই নিতে আইনজীবীদের হুড়োহুড়িতে কখনো বিরক্তি প্রকাশ করেন। স্ত্রীর সঙ্গে আলাপকালে ছিলেন প্রফুল্ল। রিমান্ড শুনানির সময় বুকে হাত দিয়ে বসে পড়েন কাঠগাড়ায়, খোঁজ করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মোল্লা কাওসারের।বিডিনিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাঠগড়ায় দাঁড়ানো জি কে শামীমের আইনজীবী হিসেবে বেশ কয়েকজন ওকালতনামা এগিয়ে দিলে শামীম দ্বিধায় পড়ে যান। আইনজীবীদের কাড়াকাড়ি, হুড়োহুড়িতে এ সময় তাকে উষ্মা প্রকাশ করতে দেখা যায়। কার ওকালতনামায় সই করবেন তা নিয়ে এজলাসে উপস্থিত নিজের কয়েকজন লোককে বারবার প্রশ্ন করতে থাকেন তিনি। তাড়াহুড়ার মধ্যে বিরক্ত শামীমকে বলতে শোনা যায়, সব আইনজীবীর ওকালতনামায় তিনি স্বাক্ষর করবেন না।

পরে বিচারক তাকে অর্থ পাচার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করলে আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই শেখ রকিবুর রহমান তাকে সেই আদেশ পড়ে শোনান। পরে রিমান্ড শুনানির জন্য শামীমকে তোলা হয় একই ভবনের ষষ্ঠ তলায়, মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসিমের এজলাসে।

এ সময় একজন আইনজীবীকে দেখিয়ে শামীম বলেন, ‘ইনি আমাদের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার। তিনি সিলেক্ট করবেন কে কে শুনানি করবেন।’ শুনানিতে কারা থাকবেন সে বিষয়ে ওই আইনজীবীকে সমন্বয় করতে বলেন শামীম।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত হোসেন হিরণ অস্ত্র আইনের মামলায় শামীমকে আরও ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার পক্ষে শুনানি করেন। অন্যদিকে তার বিরোধিতা করেন শামীমের আইনজীবী আবদুর রহমান হাওলাদার। একই মামলায় একবার রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর আবারও কেন রিমান্ড চাওয়া হচ্ছে, সেই প্রশ্ন রাখেন শামীমের আইনজীবী। তিনি তার মক্কেলের জামিনও চান।

এ পর্যায়ে বিচারক মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসিম দুই মামলার রিমান্ড শুনানির আদেশ একসঙ্গে দেবেন জানিয়ে অর্থ পাচার মামলার রিমান্ড শুনানি শুরু করেন। পরে জামিনের আবেদন নাকচ করে অস্ত্র আইনের মামলায় ৪ দিন ও অর্থ পাচারের মামলায় ৫ দিন রিমান্ডে নিয়ে শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেওয়া হয় পুলিশকে।

ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে ক্যাসিনো-জুয়াবিরোধী অভিযানের মধ্যে গত ২০ সেপ্টেম্বর গুলশান নিকেতনে শামীমের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে নগদ প্রায় ২ কোটি টাকা, ১৭৫ কোটি টাকার এফডিআর, আগ্নেয়াস্ত্র ও মদ পাওয়ার কথা জানায় র‌্যাব। শামীম ও তার সাত দেহরক্ষীকে ওই সময়ই গ্রেপ্তার করা হয়।

পরদিন শামীম ও তার দেহরক্ষীদের গুলশান থানায় হস্তান্তর করে তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইন এবং মানি লন্ডারিং আইনে তিনটি মামলা করে র‌্যাব। আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে অস্ত্র ও মাদক মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।

Leave a Reply