বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে শিবির সন্দেহে রাত ৮টার দিকে ফোন করে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এরপর রাত ৩টার দিকে সিঁড়ির পাশে মিলে তার লাশ। মাঝের এই সাত ঘণ্টায় তার ওপর চলে নির্মম নির্যাতন।
ফাহাদের নিথর দেহের ছবি প্রকাশ্যে আসতেই চোখে পড়ে কেমন নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছেন তিনি। গোটা শরীরে জখমের চিহ্ন, রক্ত জমাট বাঁধা। তলপেটেও রয়েছে আঘাতের চিহ্ন।
হল শাখা ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, ফাহাদকে জেরা ও পেটানোর সময় ওই কক্ষে অমিত সাহা, মুজতাবা রাফিদ, ইফতি মোশারফ ওরফে সকালসহ তৃতীয় বর্ষের আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী ছিলেন।
ওই কক্ষে এসে দ্বিতীয় দফায় ফাহাদকে পেটান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক ও নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একই বর্ষের মেফতাহুল ইসলাম জিয়নসহ কয়েকজন।
জানা গেছে, লাথি-কিলঘুষির পাশাপাশি ফাহাদকে ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে নির্দয়ভাবে পেটানো হয়। দফায় দফায় তার ওপর চলে নির্যাতন। একপর্যায়ে নিথর হয়ে গেলে কক্ষ থেকে বের করে দেহ ফেলে রাখা হয় সিঁড়ির পাশে।
ফাহাদের মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘তার গোটা শরীরে আঘাতের চিহ্ন পেয়েছি। ব্যথা এবং রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাঁশ, ক্রিকেট স্ট্যাম্প জাতীয় বস্তু দিয়ে তাকে আঘাত করা হয়েছে। তার হাত, পা এবং পিঠে আঘাতের চিহ্ন ছিল।’
এর আগে সোমবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে ফাহাদকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফাহাদ বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর রুমে থাকতেন। ফাহাদ কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার রায়ডাঙ্গা গ্রামের বরকত উল্লাহ ছেলে।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বুয়েট ছাত্রলীগের সহসভাপতি মোস্তাকিন ফুয়াদ এবং সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলকে চকবাজার থানা পুলিশ আটক করেছে।