নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ ॥ নওগাঁর নিয়ামতপুরে উপজেলা বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত এক বিএনপি নেতা নিহত হয়েছে। সোমবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। রবিবার বিকেলে উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের খড়িবাড়ী হাটে বিএনপির দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ওয়াহেদ আলীসহ উভয়পক্ষের অন্তত ৭জন আহত হন। নিহত বিএনপি নেতার নাম ওয়াহেদ আলী (৪০)। তিনি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। আহতরা হলেন, বিএনপি কর্মী সোহেল রানা (২৬), আব্দুল আজিজ ৩৫), নূরুননবী নূহু (৩৮), মনজুর রাসেল (৩৩), আফজাল হোসেন (৩৮) এবং শফিকুল ইসলাম (৩০)।
স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রবিবার বিকেল ৪টার দিকে উপজেলার খড়িবাড়ী বাজারে ওয়াহেদ আলীর নেতৃত্বে বাহাদুরপুর ইউনিয়ন বিএনপির কর্মীদের নিয়ে কর্মীসভা চলছিল। সভা চলার এক পর্যায়ে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ন-আহ্বায়ক ইমরান হোসেন কর্মী-সমর্থক নিয়ে ওই সভায় উপস্থিত হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ৭ জন নেতাকর্মী আহত হন। আহতদের মধ্যে ওয়াহেদ আলী, সোহেল রানা, নূরুননবী নূহু ও মনজুর রাসেলকে গুরুতর অবস্থায় রবিবার বিকেলেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। অন্যরা নিয়ামতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকাল ৭টার দিকে বিএনপি নেতা ওয়াহেদ আলীর মৃত্যু হয়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে নিয়ামতপুর উপজেলা বিএনপি দ্বিধাবিভক্তি হয়ে পড়ে। একটি পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক সাংসদ ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. ছালেক চৌধুরী এবং আরেকটি অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান। গত ১০ আগষ্ট ইছাহাক আলী সরদারকে আহ্বায়ক করে উপজেলা বিএনপির ৩৩ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে জেলা বিএনপি। এই কমিটি প্রত্যাখ্যান করে নতুন কমিটি ঘোষণার দাবিতে ডা. ছালেক চৌধুরীর পক্ষের নেতাকর্মীরা গত ১৬ আগষ্ট মানববন্ধন ও সমাবেশ করে। গত ২২ আগষ্ট মোস্তাফিজুর রহমান নেতাকর্মী নিয়ে উপজেলা সদরে সভা করার সময় ছালেক চৌধুরীর পক্ষের লোকজন তাঁদের ওপর হামলা চালায়। আহ্বায়ক কমিটি গঠন নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধের জেরে সর্বশেষ রবিবার বিকেলে উপজেলার খড়িবাড়ী বাজারে সংঘর্ষের এই ঘটনা ঘটে।
নিয়ামতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শামসুল আলম শাহ বলেন, বাহাদুপুর ইউনিয়নে বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে রবিবার বিকেলে। ওই সংঘর্ষে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃত্যুর খবর শুনেছি। তবে এখন পর্যন্ত কোনো হত্যা মামলা হয়নি।
মোস্তাফিজুর রহমান অভিযোগ করেন, ‘বাহাদুরপুর ইউনিয়ন বিএনপির নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে রবিবার বিকেলে পূর্ব নির্ধারিত কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় আমার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু আমি উপস্থিত হওয়ার আগেই ছালেক চৌধুরীর নির্দেশে ইমরান হোসেনের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী আমার কর্মী-সমর্থকদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ওয়াহেদ আলীর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ৬জন। এ ঘটনায় আমরা মামলা করব।’
এদিকে বারবার ফোন দিলেও ছালেক চৌধুরীর মুঠোফোনে নম্বরটি বন্ধ পাওয়ায় তাঁর মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘নিয়ামতপুরে একটি ইউনিয়নে কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মারামারি ঘটনায় একজন বিএনপির নেতার মারা যাওয়ার ঘটনাটি দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে হাইকমান্ডের নির্দেশে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এই নিউজটি গুজব