দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বাসায় ডেকে রাজনৈতিসহ সার্বিক খোঁজ-খবর নিয়েছেন হোম কোয়ারান্টাইনে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
গত সোমবার রাত ৯টায় গুলশানে চেয়ারপারসনের বাসা ফিরোজায় প্রবেশ করেন ফখরুল। সোয়া এক ঘণ্টা পর সেখান থেকে বেরিয়ে নিজের গাড়িতে করে চলে যান তিনি।
শর্তসাপেক্ষে ৬ মাসের কারামুক্তি পেয়ে গুলশানে নিজ বাসভবনে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন খালেদা জিয়া। এ অবস্থায় দলের কোনো কর্মকাণ্ডের বিষয়ে খোঁজ না রাখলেও চলমান বৈশ্বিক মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের দুস্থদের সহায়তায় দলের ত্রাণ কার্যক্রম মনিটরিং করছেন তিনি। দলের নির্ভরযোগ্য সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, ত্রাণ কার্যক্রম কীভাবে চলছে এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ঠিকমতো কাজ করছে কি না, এসব বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ-খবর নিতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বেগম খালেদা জিয়া। দেশের গরিব-দুখি মানুষের পাশে দাঁড়াতে দলের প্রতি দিক-নির্দেশনা দিতে মুক্তির ৪৮ দিন পর মির্জা ফখরুলকে ফিরোজায় ডেকে নিয়ে কথা বলেন তিনি। এমনকি দুস্থ মানুষের জন্য ত্রাণ বিতরণের একটি প্রতীকী কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে বলেও সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।
চেয়ারপারসনের সঙ্গে মহাসচিবের সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে দলের একাধিক সিনিয়র নেতা বলেন, ম্যাডাম ডেকেছিলেন মহাসচিবকে। সোমবার তিনি দেখা করেছেন। তবে কি নিয়ে তাদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে সে বিষয়ে মহাসচিব কাউকে কিছু জানননি। গত ২৫ মার্চ নির্বাহী আদেশে মুক্তি পাওয়ার পরে প্রথম এই একান্ত সাক্ষাৎ পান মির্জা ফখরুল। দলের নেতারা বেশ কয়েকবার সাক্ষাতের অনুমতি চেয়েও পাননি।
দলের মিডিয়া উয়িং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান বলেন, ম্যাডামের সঙ্গে মহাসচিবের দেখা হয়েছে। এর বেশি কিছু জানতে পারিনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ওনার (খালেদা জিয়া) স্বাস্থ্য, দলের সাংগঠনিক পরিস্থিতি, করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ম্যাডামের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে।
শর্তসাপেক্ষে মুক্তির পরে দেড়মাস পার হলেও গুলশানের বাসভবন থেকে এখন পর্যন্ত বের হননি খালেদা জিয়া। তাকে কোনো বক্তৃতা, বিবৃতি দিতেও দেখা যায়নি। একমাত্র তার বোন সেলিনা ইসলাম ও ভাই শামীম ইস্কান্দারসহ নিকটাত্মীয় ছাড়া কারও সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎও করছেন না। চিকিৎসকদের একটি প্যানেল তার নিয়মিত পরীক্ষা-নিরিক্ষা করছেন। খালেদা জিয়ার প্রয়াত ছোট ছেলের স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি সম্প্রতি দেশে এসে খালেদা জিয়ার দেখাশোনা করছেন।
এদিকে, খালেদা জিয়ার নির্দেশেই দেশে গত মার্চ মাসের শেষের দিকে আনুষ্ঠানিক ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করে বিএনপি। দলের সিনিয়র নেতারা নিজ এলাকায় ত্রাণ দিচ্ছেন। বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতারাও দলীয়ভাবে এবং সাধ্যমতো নিজেদের উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। খাদ্যসামগ্রী ছাড়াও মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবানসহ বিভিন্ন করোনা প্রতিরোধী সামগ্রী বিতরণ করছেন।
এর মধ্যেই করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য বিএনপির ১০ সাংগঠনিক বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদককে প্রধান করে বিশেষ সেল গঠন করা হয়। গত ১০ মে দলটির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষণ সেলের আহ্বায়ক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এই কমিটিগুলো গঠন করেন। এর আগে ৮ মে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে করোনা সেল গঠন করে বিএনপি। জেলা বিএনপি সভাপতি বা আহ্বায়ক এবং বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের প্রধান করে এই সেল গঠন করা হয়।
অন্যদিকে বিএনপি প্রায় ১২ লাখ পরিবারকে ত্রাণ সরবরাহ করেছে বলে জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, বিএনপির কেউ বসে নেই। পাড়ায়-মহল্লায় নেতাকর্মীরা কাজ করছে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ত্রাণ বিতরণ চলছে এবং এটা অব্যাহত থাকবে।