করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়া রিকশা ও ভ্যানচালক, মোটর শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিকসহ দিনমজুর ও শ্রমজীবীদের জন্য নগদ অর্থ সহায়তা কার্যক্রমের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমন নিম্ন আয়ের ৫০ লাখ পরিবার এই সহায়তা পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দরিদ্র এসব পরিবারের কাছে আড়াই হাজার টাকা করে পৌঁছে যাবে।
বৃহস্পতিবার (১৪ মে) নিম্ন আয়ের এসব পরিবারের মধ্যে নগদ অর্থ সহায়তা বিতরণের কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে বক্তব্য শেষে এক ক্লিকে উপকারভোগীদের মধ্যে সহায়তার অর্থ স্থানান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অদৃশ্য করোনাভাইরাসের কারণে সবখানে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। ফলে যারা শ্রম দিয়ে জীবন চালাত, তারা অচল হয়ে পড়েছে। আমরা তাদের তাদের কথা চিন্তা করে কিছু উদোগ নিয়েছি। কারণ দিনমজুর ও শ্রমজীবী যারা আছেন, যাদের খাওয়া-পরার জন্য দৈনিক কাজের ওপর নির্ভর করতে হতো, তাদের জন্য কোনো কাজ নেই। তারা শ্রম দিতে পারছে না। তাদের কিভাবে রমজান মাসে সহায়তা করতে পারি, সেটা ভেবেই আমরা কিছু অর্থের ব্যবস্থা করেছি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা ৫০ লাখ মানুষকে রেশন কার্ড দিয়েছি, তারা এই কার্ড দিয়ে ১০ টাকায় চাল কিনতে পারছেন। আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বিভিন্ন ধরনের ভাতা কার্যক্রম চলছে। এর বাইরেও যারা কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না, তাদের কথা চিন্তা করেই এই কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। ৫০ লাখ পরিবারের প্রতিটি পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে এককালীন নগদ সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই করোনার সময়, এই রোজার মাসে যারা কিছুটা হলেও উপকার পান, সে জন্যই এই কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কমিটি করে দিয়েছি। সেই কমিটি এই ৫০ লাখ পরিবারের তালিকা তৈরি করেছে। এই তালিকা বারবার যাচাই-বাছাই করেছি। দ্বৈততা পরিহার করার চেষ্টা করেছি। যারা কোনো না কোনো সহায়তা পাচ্ছেন, তাদের বাদ দিয়ে এই ৫০ লাখ পরিবারের তালিকা করার চেষ্টা করেছি।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এই নগদ অর্থ সহায়তা নগদ, বিকাশ, রকেট, ও শিওরক্যাশের মাধ্যমে সরাসরি চলে যাবে উপকারভোগী পরিবারের কাছে। এই টাকা তুলতে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার যে খরচ, সেই খরচও দিয়ে দেবে সরকার। অর্থাৎ উপকারভোগী পরিবার পুরো আড়াই হাজার টাকাই তুলে নিতে পারবে।
এই কর্মসূচির জন্য খরচ হচ্ছে এক হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক হাজার ২৫০ কোটি টাকা সরাসরি চলে যাবে উপকারভোগী পরিবারগুলোর মোবাইল অ্যকাউন্টে। বাকি ৭ কোটি টাকা মোবাইল সেবার খরচ হিসেবে ব্যয় হবে।
জানা গেছে, ভাতা পাওয়ার তালিকায় আছেন রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, নির্মাণ শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক, দোকানের কর্মচারী, ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যবসায় কর্মরত শ্রমিক, পোলট্রি খামারের শ্রমিক, বাস-ট্রাকের পরিবহন শ্রমিক ও হকারসহ নিম্ন আয়ের নানা পেশার মানুষ। ৫০ লাখ পরিবারে প্রায় দুই কোটি মানুষ এই অর্থ সহায়তার সুবিধার আওতায় আসবেন।
সকালে সাড়ে ১০টার কিছু পরে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস।