‘সরকার নির্দেশ দিয়ে কোভিড টেস্টিং কমিয়ে দিয়েছে’ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কোন জায়গায় চলে গেছে। আজকে লক্ষ্য করে দেখেন, প্রতিদিনের ব্রিফিং বাদ দিয়েছে। সংক্রমণ তথ্য লুকিয়ে লাভ কী? সরকারের ব্যর্থতার কারণে, তাদের উদাসীনতার কারণে কোভিড ছড়িয়ে গেছে। এই অবস্থা হলে সরকারের প্রয়োজনটা কী?’
এই অবস্থা থেকে উত্তরণে গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিতামূলক সরকার প্রতিষ্ঠায় জনগণকে ‘ঘুরে দাঁড়ানো’ উচিৎ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মানুষের এখন এই সরকারের কাছে জবাব চাওয়া উচিৎ। সরকারকে বলা উচিৎ- এনাফ ইজ এনাফ। দয়া করে বাংলাদেশের মানুষকে ক্ষমা দাও, তোমরা চলে যাও এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করার ব্যবস্থা কর।’
সোমবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
আসন্ন উপনির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের বরাবরই সিদ্ধান্ত ছিল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার। শুধুমাত্র করোনার কারণে আমরা গত দুইটি উপনির্বাচনে (যশোর ও বগুড়া) যোগ দিয়েও পরবর্তিকালে আমরা প্রচারণায় যাইনি, আমরা সরে দাঁড়িয়েছি। আমরা উপজেলা নির্বাচনসহ স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে আমরা অংশগ্রহণ করব সেই সিদ্ধান্তই আছে।
ফখরুল বলেন, আমরা ঢাকা-৫, ঢাকা-১৮, নওগাঁ-৫ ও সিরাজগঞ্জ-১ উপনির্বাচনে অংশ নেব। সে হিসেবে আগামী ১০ তারিখে নমিনেশন ফরম বিক্রি করা হবে। ১২ তারিখে পার্লামেন্টারি বোর্ড সাক্ষাতকারের জন্য বসবে প্রার্থী চূড়ান্ত করার জন্যে।
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘মেজর অবসরপ্রাপ্ত সিনহার হত্যার বিষয়টা অত্যন্ত বিগ রুটেড। এখানে অনেকগুলো বিষয় সামনে চলে এসেছে। একটা হচ্ছে- স্পষ্টে এক্সট্টা জুডিশিয়াল কিলিং। পুলিশকে এই অথরিটি কে দিয়েছে? এখন পর্যন্ত আমাদের জানা নেই যে, পুলিশ মুহূর্তের মধ্যে কাউকে গুলি করে হত্যা করতে পারে। দুই নম্বর হচ্ছে যে, হত্যার ইম্যুনিটি (দায়মুক্তি) দেয়া হয়েছে কি না। আমরা জানি না, এই ধরনের দায়মুক্তি পুলিশের আছে কি না কাউকে গুলিকে হত্যা করতে পারে।’
সিনহা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ধামাচাপা দেয়া হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেখুন এই সিনহার বিষয়টাকে কিভাবে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে এবং এখনও হচ্ছে। বলা হচ্ছে যে, এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কোনোভাবে এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আমরা যে রিপোর্ট পড়লাম গণমাধ্যমের মাধ্যমে সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, প্রায় ২০০ লোক কিলিং হয়েছে কক্সবাজারে, সেগুলো বিচারবহির্ভূত হত্যা।’
তিনি বলেন, ‘এরপর দেখা গেলো যে, পুলিশ অফিসার যারা অভিযুক্ত তাদের যে সম্পদের বিবরণ আমরা পেলাম কোটি কোটি টাকার সম্পদ, বিভিন্ন জায়গায় সম্পদ। এর থেকে প্রমাণিত হয়, পুলিশের এই এজেন্সিরা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্থারা তারা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এই সমস্যা বিএনপির সমস্যা নয়, গোটা জাতির সমস্যা। যখন একটা ছেলেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তার হদিস পাওয়া যায় না সেটা শুধু আওয়ামী লীগ-বিএনপি বলে নয়, যেকোনো মানুষের জন্য নিরাপত্তার বিষয়, তার পরিবারের ভবিষ্যতের বিষয়।’
দিনাজপুরের ইউএনওর ওপর হামলার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, দিনাজপুরের ঘোড়ারঘাটে ইউএনওকে রাতে তাকে হত্যার জন্য এভাবে আহত করা হলো, তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সাথে লড়াই করছেন। আর দেখা গেলো অল অন এ সাডেন র্যাব একটা প্রেস কনফারেন্স করে বলে দিলো যে, এটা চুরির জন্য এই আক্রমণ করা হয়েছে। যেটা আমরা মনে করি যে, একেবারেই দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক প্রতিচ্ছবি। দুইটি দিক থেকে।
তিনি বলেন, একটা হচ্ছে ‘ল লেস নেস। বাড়িতে ঢুকে যে কাউকে মেরে দেয়া যায়, কাউকে আঘাত করা যায়। আরেকটা হচ্ছে যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্থাগুলোকে কারো কাছে জবাবদিহি করতে হয় না বলেই চট করে একটা সংবাদ সম্মেলন করে বলে দেয় যে, চুরির জন্য ঘটনা ঘটছে। গোটা বিষয়টা ডাইভার্ট হয়ে গেল।
তিনি বলেন, আমরা পরে কী দেখতে পারছি? দেখতে পারছি বলা হচ্ছে যে, সরকারি জমি জোর করে দখল করছে অথবা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছে সরকারি দলের লোকেরা, এই উপজেলা কর্মকর্তা তিনি বাধা দিয়েছেন বা দেননি যে কারণে তার ওপরে এই আক্রমণ হয়েছে। এই অভিযোগ অনেক এসেছে এবং সরকারি দলের লোকজনকে গ্রেপ্তার করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে- যেটা খুবই বিপদজনক। আজকে এদেশে আসলেও কোনো সরকার নেই। যে সরকার আছে তাদের একমাত্র নিজেদের দলীয়করণ করা, নিজেদের বিত্ত তৈরি করা ছাড়া অন্য কোনো আগ্রহ নেই।
এ সময় অবিলম্বে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও যারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও পুনরুল্লেখ করেন ফখরুল।