পাবনার ঈশ্বরদীতে শেখ হাসিনার বহনকারী ট্রেনে গুলির মামলায় ৯ জনের ফাঁসি, ২৫ জনের যাবজ্জীবন ও ১৩ জনের ১০ বছরের স্বশ্রম কারাদন্ডের রায় ঘোষণা করেছে আদালত। বুধবার দুপরে পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রুস্তম আলী এই রায় ঘোষণা করেন।
১৯৯৪ সালে পাবনার ঈশ্বরদীতে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও আওয়ামীলীগ সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে গুলি ও বোমা হামলা মামলায় দীর্ঘ ২৫ বছর পর এই রায় ঘোষণা করা হয়। দন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা অধিকাংশ ঈশ্বরদী উপজেলার বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী।
এই মামলায় গত রোববার আসামীগন আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে বিচারক রুস্তম আলী জামিন আবেদন নাকচ করে ৩০ আসামীকে জেলা হাজতে প্রেরণ করেন।
ফাঁসির আদেশ প্রপ্তরা আসামীরা হলেন, এই মামলার প্রধান আসামী ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও তৎকালিন ছাত্রদল উপজেলা সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু, ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র মোখলেছুর রহমান বাবলু, পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান আখতার, তৎকালিন উপজেলা ছাত্রদল সভাপতি ও ঈশ্বরদী কলেজের সাবেক ভিপি রেজাউল করিম শাহিন, বিএনপির নেতা শহিদুল ইসলাম অটল, তৎকালিন ছাত্রদল নেতা মাহবুবুর রহমান পলাশ, তৎকালিন পৌর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা নুরে আলাম শ্যামল, তৎকালিন ছাত্রদল নেতা আজিজুর রহমান শাহিন ওরফে প্রবলেম শাহিন, পৌর সভার সাবেক কমিশনার শামসুল আলম।
যাবজ্জীবন প্রাপ্তরা বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী তারা হলেন, আল আমিন, খোকন (বর্তমানে মৃত) , ইসলাম হোসেন জুয়েল, আলাউদ্দিন বিশ্বাস, শিমু, আনিস শেখন, নুরুল ইসলাম আক্কেল আলী, রবি, এনাম, কল্লোল, কালা বাবু, মামুন, সেলিম আহমেদ, মামুনুর রহমান, তুহিন, লিটন, আব্দুল্লাহ আল মামনু রিপন, লাইজু, আব্দুল জব্বার, আব্দুল হাকিম টেনু, আবুল কালাম, আলমগীর হোসেন, পলাশ ও পায়েল।
১০ বছরের যাবজ্জীবন প্রাপ্ত বিএনপির নেতাকর্মীরা হলেন, রাজু, বাবলু, আনোয়ার হোসেন জনি, বরকত, মুক্তা, মুকুল, দোলাল সরদার, জামরুল, তুহিন বিন ছিদ্দিক, মওলা, ফজলুর রহমান, আব্দুল বারিক ও রস্তম।
আদালত সুত্র থেকে জানা যায়, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা সাংগঠনিক সফরে খুলনা থেকে রাজশাহী অভিমুখে ট্রেনযোগে বের হন। পথিমধ্যে তিনি বিভিন্ন স্থানে পথসভা করেন। ঈশ^রদী স্টেশনে তার একটি নির্ধারিত পথসভা ছিল। তাকে বহনকারী ট্রেনটি পাকশী স্টেশনে পৌঁছার পরপরই ওই ট্রেনে ব্যাপক গুলিবর্ষণ ও বোমা হামলা চালানো হয়।
এ ঘটনায় ঈশ^রদী জিআরপি থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বাদি হয়ে ওইদিনই একটি মামলা দায়ের করেন। ৩ বছর পর ১৯৯৭ সালে ৩ এপ্রিল পুলিশ মোট ৫২ জনের নামে এ মামলার চার্জশিট দাখিল করেন। ৫২ আসামীর মধ্যে ৬ জন মারা গেছেন।
মামলার রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবি ছিলেন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আক্তারুজ্জামান মুক্তা ও অ্যাডভোকেট সালমা আহমেদ শিলু। আসামী পক্ষে আইনজীবি ছিলেন অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম গ্যাদাসহ অন্যরা।
বিএনপির সহ তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এটা একটা হাস্যকর রায়। এই মামলায় মৃত্যদন্ড তো দুরের কথা কোন সাজাই হওয়ার কথা নয়। ঐ ঘটনায় যে রায় হয়েছে তা পৃথিবীর একটি নজির বিহীন রায় বলে আমি মনে করি। কারন ঐদিন আমি আওয়ামী সেচ্ছা সেবক লীগের যুগ্ন আহবায়ক থাকার সুবাদে শেখ হাসিনার সফর সঙ্গী ছিলাম। আমি ঐ ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী। কিন্ত ঐ ঘটনার জন্য কখনো মৃত্যুদন্ড কিংবা যাবজ্জীবন রায় হতে পারে না। রায়ের পর আদালত থেকে বের হলে তার উপর হামলা করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল রহিম লাল বলেন, আমরা এই রায়ে অত্যান্ত খুশি। কারন ঐদিন আমার নেত্রী শেখ হাসিনাকে মেরে ফেলার ষড়যত্র করা হয়েছিল। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে তিনি সেদিন বেঁচে গেছেন। আমরা ঐদিন মামলা করতে গেলে মামলা করতে দেয়া হয়নি। পরে ঈশ্বরদী জিআরপি থানা পুলিশ বাদী হয়ে ঐ মামলাটি করেছিল। দীর্ঘদিন পর হলেও ঐ মামলার রায় হওয়ায় আমরা মাননীয় আদালতকে ধন্যবাদ জানাই।