যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বদলে যাচ্ছে। রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে ক্ষমতায় আসছেন ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেন। নির্বাচনের ফলাফল স্পষ্ট হওয়ার পরপরই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাইডেনকে অভিনন্দন জানান।
অভিনন্দন বার্তায়, ভবিষ্যতে বিভিন্ন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একসাথে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা।
৭৭ বছর বয়সী বাইডেন এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে চললেও শেখ হাসিনার সঙ্গে আগেও একত্রে কাজ করেছেন তিনি।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্র। তখন দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন জো বাইডেন। সেবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কো-চেয়ার হিসেবে সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। সেই অনুরোধ গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। জো বাইডেন, শেখ হাসিনা ছাড়াও সম্মেলনে কো-চেয়ার ছিলেন জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনবো আবে এবং রুয়ান্ডার তখনকার প্রেসিডেন্ট পল কাগামে।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে জো বাইডেন এবং শেখ হাসিনা উভয়ের বক্তব্যেই বিশ্ব শান্তি রক্ষার পথে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের বিষয়গুলো জায়গা পায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেন, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী এবং জাতিসংঘের জন্যই এটি এখন অনেক বেশি জটিল ও বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে।
বাইডেনের মুখেও শোনা যায় একই ধরণের বক্তব্য। উদ্বোধনী ভাষণে বাইডেন আফ্রিকার বিভিন্ন দেশসহ বিশ্বজুড়ে সহিংসতা থেকে নিরীহ জনগণকে রক্ষার জন্য শান্তিরক্ষীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘকে দেওয়া বাংলাদেশের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে বলেন, বিশ্বে শান্তি রক্ষায় পরীক্ষিত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাইডেনের বিজয়ী হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর রোববার তাকে পাঠানো অভিনন্দনবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামীতে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনসহ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় একসাথে কাজ করবে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র। বাইডেনের নেতৃত্বে বিশ্ব শান্তি, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং জলবায়ু ইস্যু নতুন মাত্রা পাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ায় বাংলাদেশের সংকটপূর্ণ ইস্যুগুলোতে, যুক্তরাষ্ট্র আগের চেয়ে আরও বেশি সহযোগিতা করবে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন প্রত্যাশী বাংলাদেশিরা সহজে স্থায়ী হওয়ার সুবিধা পাবেন। তারা মনে করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে, অভিবাসনবিরোধী যে মনোভাব গড়ে উঠেছিল তা থেকে সরে আসবে ওয়াশিংটন।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক সাহাব এনাম খান বলেন, পররাষ্ট্র নীতিতে যেটা ওবামা প্রশাসন পর্যন্ত আমরা দেখেছি সেগুলো কিন্তু চলতে থাকবে। যুক্তরাষ্ট্র জো বাইডেনের নেতৃত্বে বহুপাক্ষিক বিশ্বব্যবস্থার দিকে আবার ঝুঁকে পড়বে।
অভিবাসীবান্ধব হওয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশি আর মার্কিন মুলুকে পাড়ি জমাতে আগ্রহীদের জন্য বাইডেন প্রশাসনকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন এই বিশ্লেষক।
এ বিষয়ে সাহাব এনাম খান বলেন, স্বস্তির জায়গাটা হলো, যে ধরণের ইমিগ্রেশন পলিসি মার্কিন প্রশাসন নিচ্ছিলো, সে জায়গায় হয়তোবা আমরা একটা বড় রকমের পরিবর্তন দেখব। দ্বিতীয়ত অভিবাসন ছাড়াও যাদের মিডল ইনকাম বা লোয়ার ইনকাম আছেন তাদেরও একটা ট্যাক্স সম্পর্কিত রিলিফ আমরা দেখব। সেখানেও কিন্তু আমাদের বাংলাদেশি প্রবাসী আছেন তাদের একটা স্বস্তি হবে।
গেলো কয়েক বছরে ট্রাম্প প্রশাসন বৈশ্বিক বিভিন্ন সংস্থায় কমিয়েছে অনুদান। বাইডেন অনুদান বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এতে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে ঢাকা তার কাঙ্ক্ষিত সুবিধা আদায় করে নিতে পারবে। এছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানেও নতুন করে আশার আলো দেখছেন তিনি। জলবায়ু সংকট মোকাবিলায়ও ওয়াশিংটনকে পাশে পাবে ঢাকা।