নিরীক্ষা দাবির টাকা নিয়ে অপারেটরদের সঙ্গে টানাপোড়েন এবং ঝুলন্ত তার অপসারণ নিয়ে উত্তাপের মধ্য দিয়ে বিদায়ী বছর গেলেও ২০২১ সালে ফাইভ-জি সেবা চালু, অবৈধ হ্যান্ডসেট বন্ধ ও টেলিযোগাযোগ আইন সংশোধনের মতো বড় বড় উদ্যোগ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এসব পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন।
ফাইভ-জি চালু করাই আগামী বছরের মূল চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তিনি বলেন, “২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে এ প্রযুক্তি চালু করার পরিকল্পনা থাকলেও আমাদের যে কোনো দিন এ সেবা চালু করার প্রস্তুতি রয়েছে।”
ফাইভ-জি নীতিমালা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “এ সেবা চালু করতে অপারেটরদের যে তরঙ্গ প্রয়োজন হবে, তা আমরা প্রস্তুত করে রেখেছি। তরঙ্গ নিলামের জন্যও সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।”
প্রাথমিকভাবে ফাইভ-জি সেবা সবার প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন টেলিযোগাযোগমন্ত্রী।
“২০২১ সালে প্রাথমিকভাবে ব্যাংক, কৃষি, ব্যবসা খাত ও শিল্পাঞ্চলে এ সেবা শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।”
বাংলাদেশে ১৯৯০ সালে টু-জি প্রযুক্তির মোবাইল ফোন সেবা চালুর পর আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই ২০১৩ সালে আসে থ্রি-জি। এরপর ২০১৮ সালে চালু হয় ফোর-জি সেবা।
দক্ষিণ কোরিয়া, আয়ারল্যান্ড, স্পেন, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরই মধ্যে ফাইভ-জি প্রযুক্তি চালু করেছে। এ প্রযুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল ‘ইন্টারনেট অব থিংকস- আইওটি’, যেখানে যন্ত্র থেকে যন্ত্রে যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসগুলোকেও গ্রাহক হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
শুধু ফাইভ-জি নয়, আগামী বছরের মধ্যে চার মোবাইল ফোন অপারেটরকে তাদের বিটিএস ফোরজিতে রূপান্তরের কথা বলা হয়েছে এবং এ কাজ ২০২১ সালের মধ্যেই শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।
২০২১ সালের শুরুতে অবৈধ হ্যান্ডসেট বন্ধে কাজ শুরু হচ্ছে জানিয়ে টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বলেন, “অবৈধ ও নকল মোবাইল হ্যান্ডসেট বন্ধে এপ্রিলে প্রযুক্তি বাস্তবায়ন শুরু করবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা- বিটিআরসি। প্রযুক্তিটি চালু হলে গ্রাহকের হাতে থাকা এসব হ্যান্ডসেটে কোনো অপারেটরের সিমই চলবে না।”
অবৈধ মোবাইল সেট বন্ধ ও বৈধ সেটের নিবন্ধনে ডিসেম্বরে বিটিআরসির সঙ্গে চুক্তি করে দেশীয় প্রতিষ্ঠান সিনেসিস আইটি। চুক্তি অনুযায়ী ১২০ কার্যদিবসের মধ্যে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) সিস্টেম চালু করতে হবে সিনেসিসকে।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, “এ প্রযুক্তি চালু হলে দেশে অবৈধ হ্যান্ডসেট কমে যাবে এবং সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে প্রায় ৯টি কারখানায় মোবাইল ফোন সংযোজন ও উৎপাদন হচ্ছে। ফলে দেশীয় শিল্পেরও বিকাশ হবে।”
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন-২০০১ সংশোধনের উদ্যেগে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “এটি একটি জটিল বিষয় হলেও কাজ এগিয়ে চলছে। আশা করছি চলতি বছরেই এ কাজ সম্পূর্ণ করা যাবে।”
২০২১ সালে টেলিযোগাযোগ সেবার মান উন্নয়নে বিদ্যমান নীতিমালাগুলো বাস্তবায়নে আরও জোর দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “বিটিআরসিতে জনবলের অভাব রয়েছে। এ জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থায় কী আছে কী নেই তা ঠিক করতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”
‘ফাইভ-জি’ সহায়ক শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পাশাপাশি চাহিদা অনুযায়ী উচ্চ গতির ইন্টারনেট নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশকে তৃতীয় সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
২০২৪ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের কাজ এগিয়ে চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ কী ধরনের হবে তা আগামী এপ্রিলের মধ্যে চূড়ান্ত করাসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া এগিয়ে যাচ্ছে।
আগামী বছরে প্রত্যাশা নিয়ে মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব এস এম ফরহাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিগত বছরগুলোরে মতো নতুন বছরেও টেলিযোগাযোগ খাত দেশের জনগণ তথা সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে, এই প্রত্যাশা করি।”
এ খাতে ‘বাড়তি করের বোঝা’ কমানোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের জনগণের কঠিন সময়ের মধ্যে টেলিযোগাযোগ খাত যেভাবে সবার পাশে দাঁড়িয়েছে, আমরা আশা করি সরকার এবং নীতি নির্ধারকরা তা বিবেচনা করে এ খাতের উপর যে বাড়তি করের বোঝা আছে আগামীতে তা কমিয়ে আনবে।”
জাতীয় টেলিকম নীতিমালার রূপরেখা অনুযায়ী নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সরকার সংশ্লিষ্ট সব মহল এই খাতকে সহযোগিতা করে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে যথাযথ ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন অ্যামটব মহাসচিব।