আমি ওবায়দুল কাদেরকেও ভয় পাই না: কাদের মির্জা

‘আমি বললে অপরাধ। ধমকায়- গুলি করবে, ঝাঁজরা করে দেবে। কিন্তু আমি এসবকে ভয় পাই না। আমি ওবায়দুল কাদেরকেও ভয় পাই না। দল থেকে বহিষ্কার করে দেওয়া হলেও আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি ছেড়ে যাব না।’ মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) বিকেলে বসুরহাট পৌরসভার জামাইরটেকে নির্বাচনী পথসভায় এসব কথা বলেন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনের আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা।

গত কয়েক দিন ধরে তার দেয়া একাধিক বক্তব্য নিয়ে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে আলোচনা চলছে। এ নিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং তার বড় ভাই ওবায়দুল কাদেরও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

এর আগে এক জনসভায় তিনি বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলছি, বৃহত্তর নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের কিছু কিছু চামচা নেতা আছেন, যারা বলেন অমুক নেতা, তমুক নেতার নেতৃত্বে তারা বিএনপির দুর্গ ভেঙ্গেছে। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিন চারটা আসন ছাড়া বাকি আসনে আমাদের এমপিরা পালানোর দরজা খুঁজে পাবে না। এটাই হলো সত্য কথা।

তিনি বলেন, এই বৃহত্তর নোয়াখালীতে আমাদের নেতা ওবায়দুল কাদের, বিএনপির মওদুদ আহমেদ ও জামায়াতের নাছের সাহেব (আবু নাছের মুহাম্মদ আবদুজ্জাহের) অসুস্থ। তারা তিনজনই জাতীয় নেতা, আল্লাহর কাছে তাদের নেক হায়াত চাই। এই তিন ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কোনো নেতা বা সমমর্যাদার কোনো নেতা এই এলাকাতে নাই।

ওবায়দুল কাদেরর ছোট ভাই বলেন, ফেনীর জনপ্রিয় উপজেলা চেয়ারম্যান একরামকে গুলি করে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। প্রকৃত খুনিদের বিচার হয়নি। নোয়াখালীর কতিপয় দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা (একরামুল করিম চৌধুরী এমপিসহ অন্যরা) শত শত কোটি টাকা লুটপাট করছে। এখন দলের হেড কোয়ার্টার থেকে আমাকে আল্টিমেটাম ও হুমকি দেয়া হচ্ছে। তিনি নাকি চট্টগ্রাম বিভাগীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। কোন কোন নেতা-এমপির কাছ থেকে মাসোহারা নেন, আমার কাছে খবর আছে।

আবদুল কাদের মির্জা বলেন, হাওয়া ভবনের সাথে সংশ্লিষ্ট আতাউর রহমান ভুইয়া মানিক (তমা গ্রুপের চেয়ারম্যান), ১/১১’র কুশিলব জেনারেল মঈন ইউ আহমদের ভাই জাবেদ (মিনহাজ আহমেদ জাবেদ) এখন আওয়ামী লীগের নেতা। তারা দুজন এখন নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত। অথচ পূর্বের কমিটির সহ-সভাপতি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিনকে কমিটিতে না রেখে উপদেষ্টা করা হয়েছে। এ হচ্ছে আমাদের এখনকার আওয়ামী লীগ। ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাদের কোন মূল্য নেই। ওয়ান ইলেভেনের সময় আমাদের এখানকার এক নেতা চামড়া বাঁচানোর জন্যে মইন ইউ আহমেদের ভাইয়ের সাথে লেনদেন করে নিজের পিঠের চামড়া সেভ করেছে। সে এখন নোয়াখালীর সিনিয়র প্রেসিডেন্ট। থাকে আমেরিকা। এটা হলো আমাদের কমিটি।

তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্রটা কি, আমি এখান থেকে শুরু করতে চাই। ভোট ডাকাতি করা চলবে না। আসুন, গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা সহযোগিতা করি। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। ৪ বার আমাকে ও আমার ছেলেকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে। ব্যাখ্যা দেব না, কথা বললে আমাদের নেতাও (ওবায়দুল কাদের) মনে কষ্ট নেবেন। নোয়াখালী ও ঢাকার কোন কোন নেতা আমার বিরুদ্ধে কেন্দ্রকে ক্ষেপিয়েছে। আমার কোন প্রতিযোগিতা নেই। আমাদের নেতা ওবায়দুল কাদেরের পর এখানকার পরবর্তী নেতা শাহাব উদ্দিন সাহেব (কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন)। ষড়যন্ত্র করে কোন লাভ হবে না। ২০০১ সালে আমাদের কর্মীরা যখন দিশেহারা তখন শাহাব উদ্দিন সাহেব যাকে যতটুকু পেরেছেন অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছে। এই উপজেলার চেয়ারম্যান হিসেবে কোনোদিন সরকারি সুযোগ সুবিধা তিনি নেননি। 

এদিকে মঙ্গলবার সকালে বসুরহাট পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের একটি নারী সমাবেশে এবং বিকেলে জামাইরটেকে নির্বাচনী পথসভায় বক্তব্য দেন কাদের মির্জা। এসব সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে কাদের মির্জা বলেন, আপনি জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন মাদকের বিরুদ্ধে। কিন্তু সেটা আমাদের নেতারা কার্যকর করেনি, প্রশাসন কার্যকর করেনি। আপনি এই সিদ্ধান্ত দেন যে মাদকের সঙ্গে, নারীর সঙ্গে যারা জড়িত; তারা দলের কোনো পর্যায়ে কোনো প্রতিনিধি হতে পারবে না।

একজন উপজেলা চেয়ারম্যানের সমালোচনা করে কাদের মির্জা বলেন, ‘এই উপজেলা চেয়ারম্যান ক্ষমতায় থাকাকালে সরকারি বাসায় নারী, জুয়া চলত। চর বালুয়ায় হাজার হাজার একর জমি দখল করেছে। মাদকের ব্যবসা করে। কোম্পানীগঞ্জের বড় কাজগুলো নোয়াখালীর নেতারা দিছে, সে করেছে। আরেকজন আছে আমার ভাগনে রাহাত, আমাদের রক্তের নয়। সে বদির সঙ্গেও দেখা করেছে। সে সরকারি জায়গা দখল করে ভবন করেছে। আমি সেনাবাহিনী নিয়ে ভাঙতে গেছি, সে আমার দিকে চোখ রাঙিয়েছে, কারণ তার কাছে অস্ত্র আছে।

আওয়ামী লীগের জেলা কমিটি নিয়ে তিনি বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি করা হয়েছে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের বাদ দিয়ে।

তবে এ বিষয়ে আতাউর রহমান ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে জানান, উনি যা বলেছেন, তা তার একান্ত ব্যক্তিগত মতামত। গত পাঁচ বছর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। যেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দিয়েছেন। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো, হাওয়া ভবনের বিষয়ে, হাওয়া ভবন কোথায়, আমি তা জানিও না, চিনিও না। আমি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও কখনো ছিলাম না।

অপরদিকে সাবেক সেনাপ্রধানের ভাই মিনহাজ আহমেদ জাবেদ জানান, ছাত্রাবস্থায় সক্রিয় রাজনীতি না করলেও আমি শৈশব থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করি। এরপর দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হই। এতে দলের নেতারা যোগ্য মনে করায় সহসভাপতি করেছেন, আমি কোনো তদবির করিনি।

আবদুল কাদের মির্জার এমন বক্তব্যে নোয়াখালীর রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। তবে তার বক্তব্যের খণ্ডাংশ প্রচার করে মিডিয়ায় বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছেন আবদুল কাদের মির্জা। এ বিষয়ে তিনি বুধবার (৬ জানুয়ারি) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষে বিভিন্ন সভায় আমার দেয়া বক্তব্য নিয়ে একটি কুচক্রী মহল নানা ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। নির্বাচন নিয়ে নানা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে সাধারণ মানুষের মাঝে। আমি শুধুমাত্র একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপনের উদ্দেশ্যে ১৬ জানুয়ারি অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নির্বাচন যেন হয় এজন্য নানা নির্বাচনী সভায় কিছু কথা বলেছি। কিন্তু কোন কোন গণমাধ্যম সেগুলো বিস্তারিত উল্লেখ না করে বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আমার বক্তব্যের খণ্ড অংশবিশেষ প্রচার করেছে। আমি শুধুমাত্র বৃহত্তর নোয়াখালীর আঞ্চলিক রাজনীতি নিয়ে নানা অনিয়মের কথা বলেছিলাম। জাতীয় ইস্যুতে আমি কোনো বক্তব্য রাখিনি।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি আরো জানান, বিগত একযুগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে, সে বিষয়গুলো আমি আমার বক্তব্যে উল্লেখ করেছিলাম। বৃহত্তর নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের কিছু চামচা নেতা আছে। যারা বলেন, ওমুক নেতা, তমুক নেতার নেতৃত্বে বিএনপির দূর্গ ভেঙ্গেছেন, সত্যি কথা হলো সাধারণ মানুষ বলে, শেখ হাসিনা একলা কি করবে, এতে প্রতীয়মান হয় যে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তার কারণে বৃহত্তর নোয়াখালীতে বিএনপির দূর্গ ভেঙ্গে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বেড়েছে।

তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন, তখন অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করেন। ২০০৮ সাল থেকে অদ্যাবধি বাংলাদেশে যেসকল উন্নয়ন অর্জন হয়েছে ও হচ্ছে তার সবকিছু দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে হচ্ছে।

Leave a Reply