কাউন্সিলর পদে বহি*ষ্কার হচ্ছেন বি*দ্রোহীরা

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘গলার কাঁটা’ বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীরা। অপরদিকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও স্বস্তিতে নেই আওয়ামী লীগ কাউন্সিলর প্রার্থীরা। নগরীর ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১৬১ জন ও ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে ৫৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এর মধ্যে ৩৫টি সাধারণ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর পদে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। ৬টি ওয়ার্ডে রয়েছেন একক প্রার্থী। এমনকি বিদ্রোহীদের তালিকায় রয়েছেন দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত ১২টি ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলরও। একাধিক ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে হেভিওয়েট বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় টেনশনে আছেন ওইসব ওয়ার্ডের দলীয় প্রার্থীরা। ৪ নম্বর চাঁন্দগাঁও ও ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গাসহ বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন বিতর্কিতরা। এদের নিয়েও দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা রয়েছেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। ইতোমধ্যে কয়েকটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। ১১ জানুয়ারি থেকে চসিক নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা শুরু হলে এ সংঘাত-সংঘর্ষ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে ‘বিদ্রোহী’ কাউন্সিলর প্রার্থীদের দল থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে। শনিবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বহিষ্কারের এ ঘোষণা আসতে পারে বলে জানিয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ।

১৯ ডিসেম্বর নগরীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছিলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দল সমর্থিত প্রার্থীর বাইরে যারা সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হিসেবে থাকবেন এবং বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি জানান, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ দলে থাকতে পারবেন না। তাদের বহিষ্কার করা হবে। আ জ ম নাছির উদ্দীন এখন ঢাকায় আছেন। তিনি আসুক। ৯ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের বহিষ্কার করা হবে। তারা দলের আইডি কার্ড বা কোনো কিছুই ব্যবহার করতে পারবেন না। এমনকি বিদ্রোহী প্রার্থীদের যারা সহযোগিতা করছেন তাদের চিহ্নিত করে বহিষ্কার করা হবে।

আওয়ামী লীগ মেয়র পদপ্রার্থী রেজাউল করিম জানান, একাধিক ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় বিপাকে পড়েছি। দলের সিদ্ধান্ত মেনে তাদের নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে দাঁড়াতে বলছে হাইকমান্ড। না সরলে চরম খেসারত দিতে হবে তাদের।

তবে সংশ্লিষ্টদের অনেকেই বলেছেন, অনেক ওয়ার্ডে বিতর্কিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থন দিয়েছে দল। যথেষ্ট সময় পাওয়ার পরও প্রার্থী বাছাই বা পরিবর্তনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এ বিষয়ে কোনো ভ্রূক্ষেপ করছেন না। প্রার্থী পরিবর্তনে দলের তৃণমূল নেতারা আবেদন-নিবেদন করলেও তাতে কোনো কাজ হয়নি। নগরীর ৪ নম্বর চান্দগাঁও ওয়ার্ডে বিতর্কিত প্রার্থী সাইফুদ্দিন সাইফু ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডে আবদুল বারেককে সমর্থন দেওয়া হয়েছে। এ দুজনের বিরুদ্ধে এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। এর মধ্যে আবদুল বারেকের বিরুদ্ধে সর্বশেষ সাইবার ট্রাইব্যুনালে এক মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা হয়েছে। তারা বলছেন, বিদ্রোহীদের বহিষ্কারই সমস্যার সমাধান হবে এটা কেউ মনে করেন না।

১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি গাজী মোহাম্মদ শফিউল আজিম। এ ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সক্রিয় আছেন সাবেক কাউন্সিলর তৌফিক আহমেদ চৌধুরী। ২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ডে মহানগর যুবলীগের সদস্য মোহাম্মদ ইব্রাহীমকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মাঠে আছেন সাবেক কাউন্সিলর সাহেদ ইকবাল। ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ডে মনোনয়ন পেয়েছেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য আবুল হাসনাত মোহাম্মদ বেলাল। সেখানে মাঠে আছেন সাবেক কাউন্সিলর আবুল ফজল কবির আহমদ মানিক। ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গি বাজার ওয়ার্ডে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনকে। বাদ পড়া সাবেক কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সক্রিয় আছেন নির্বাচনী মাঠে। এছাড়া মনোনয়নবঞ্চিত আওয়ামী লীগের সাবেক কাউন্সিলরদের মধ্যে ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের জহুরুল আলম জসীম, ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডের মোরশেদ আক্তার চৌধুরী, ১২ নম্বর সরাইপাড়া ওয়ার্ডে সাবের আহমেদ, ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ডের এফ কবির মানিক, ২৫ নম্বর রামপুরা ওয়ার্ডের এসএম এরশাদ উল্লাহ, ২৭ নম্বর দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ডের এইচএম সোহেল, ২৮ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ডের আব্দুল কাদের, ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের তারেক সোলায়মান সেলিম ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। চসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান জানান, চসিক নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ২৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

২৯ মার্চ চসিক নির্বাচনের কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির কারণে নির্ধারিত তারিখের এক সপ্তাহ আগে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। নির্ধারিত সময়ে ভোট করতে না পারায় ৬ আগস্ট সরকার মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনকে চসিকের প্রশাসক হিসেবে ১৮০ দিনের জন্য দায়িত্ব দেয়। ১৪ ডিসেম্বর নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণা করে কমিশন।

Leave a Reply