ফজরের আজান ভেসে আসছে মুয়াজ্জিনের মধুর কণ্ঠে। বাইরের আলো-আধাঁরিতে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। ঠিক এমনই এক মুহূর্তে যেন নিজের মৃত্যু হয়, আল্লাহর কাছে সেই কামনা করেছিলেন তাসনিম আহসান নামে এক যুবক। গত ৭ অক্টোবর এমন আকুতি জানিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন তিনি।
বৃহস্পতিবার ফজর নামাজের সময়ই না ফেরার দেশে পাড়ি জমান সেই যুবক (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)।
তাসনিমের সেই পোস্ট তিন মাস পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। জানা গেছে, সদ্যপ্রয়াত সেই যুবক মরণব্যাধী বোন মেরু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ সময় ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
তাসনিমের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার স্ত্রী তমা আলম। বৃহস্পতিবার তাসনিমের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকেই মৃত্যুর বিষয়টি জানিয়ে স্ট্যাটাস দেন তমা।
তিনি লেখেন, ‘আমার স্বামী Tasneem Ahsan আজ ফজরের ওয়াক্তে আল্লাহর মেহমান হয়ে চলে গেছেন। আপনাদের সবার কাছে তার মাগফিরাত কামনা করে দোয়ার আবেদন করছি।’
নেটিজেনরা তাসনিমের স্ট্যাটাস শেয়ার করে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছেন। স্ট্যাটাসটি নিজের অফিসিয়াল পেজে শেয়ার করেছেন দেশের জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা শায়খ আহমাদুল্লাহ।
তিনি লেখেন, আহ! কী চমৎকার আকুতি! কতো সুন্দর প্রস্তুতি! বান্দার আকুতি কি দারুণভাবে পূরণ করেন মালিক! এর আগে জাভেদ কায়সার (রহ.) আল্লাহর কাছে মক্কার হারামে মৃত্যু কামনা করেছিলেন। বহু বছর পর তার সে দোয়া কবুল করেছেন মালিক। দোয়া কবুলের এসব কাহিনী যেন আমাদেরকে মালিকের দিকে অগ্রসর হতে সাহায্য করে। হে মালিক, এমন জীবন দিও যেন প্রস্তুত হয়ে যেতে পারি!
এরপর থেকে নিজের মৃত্যু নিয়ে তাসনিমের স্ট্যাটাসটি হু হু করে ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। অনেকের হৃদয়ে প্রচণ্ড রকম ঝাঁকুনি দিয়ে গেছেন তাসনিম।
তাসনিমের স্ট্যাটাস পড়ে অনেকেই চোখের জলে বুক ভিজিয়েছেন।
পাঠকের উদ্দেশে তাসনিমের সেই দীর্ঘ স্ট্যাটাসটির কিছু অংশ দেয়া হল:
মাঝে মাঝেই ইদানীং আমি চিন্তা করি, আমার মৃত্যুর দিনটা কেমন হবে। যেদিন আমি একটা জলজ্যান্ত মানুষ থেকে ‘লাশে’ পরিণত হব, কেমন হবে সেই দিনটা? আমার বাসার মাঝখানে ড্রয়িংরুমের মাঝখানে কিছুটা ফাঁকা জায়গা আছে। আমি খুব ভালো বুঝতে পারি, লাশটা খুব সম্ভবত সেখানেই রাখবেন সবাই। আচ্ছা, আমার নাকে তো একটা তুলাও গুঁজে দেওয়া হবে, তাই না? আমার দাদীর লাশে আমি দেখেছিলাম ওরা তুলা ঠেসে দিয়েছিল।
আমার মনে মনে খুব ইচ্ছা আমি যেন ফজরের ওয়াক্তে আল্লাহর কাছে যেতে পারি। আধো আলো, আধো ছায়া। প্রচণ্ড বৃষ্টি পড়ছে। না থাক। প্রচণ্ড বৃষ্টি দরকার নেই। মৃত্যুর আগ মুহূর্তে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হলেও চলবে। বিরামহীন হালকা আওয়াজে বৃষ্টির শব্দের সঙ্গে মিলিয়ে ফজরের অসাধারণ আযান সেই অদ্ভুত সময়ে কানে ভেসে আসুক, আল্লাহর কাছে আবদার।
আচ্ছা, কতদিন বৃষ্টিতে ভিজি না জানেন? প্রায় ৩ বছর হতে চলল। সিঙ্গাপুরে যখন চিকিৎসার জন্য ছিলাম, তখন সেখানে ভীষণ বৃষ্টি পড়তো। কিন্তু সেই বৃষ্টিতে ভেজার সুযোগ ছিল না। কারণ, সে সময় চিকিৎসার প্রয়োজনে আমার হাতে একটা সেন্ট্রাল লাইন করা ছিল যেটা হার্ট পর্যন্ত কানেক্টেড। শরীরের ওই অংশটা আমার ভেজানো নিষেধ ছিল। আমি প্রায় টানা ১.৫ বছর গোসল করার সময়েও সে জায়গাটায় বিরামহীনভাবে পানি ঢালতে পারিনি।
আমার আর সুস্থ হওয়াও হলো না। এখন পর্যন্ত বৃষ্টিতেও ভেজা হলো না।
হঠাৎ করে মেঘ করলে ব্যস্ত ঢাকা শহর যেমন কালো হয়ে যায়, তখন আমার মৃত্যুর পরিবেশটা হলে বেশ হয়। বৃষ্টি আমি বড়ো ভালোবাসি।