ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন ওই সিটির সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।
সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিদের পুনর্বাসনের দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। আজ শনিবার দুপুরে হাইকোর্ট এলাকায় কদম ফোয়ারার সামনে এ মানববন্ধন হয়।
সাঈদ খোকন অভিযোগ করে বলেন, ‘তাপস দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের শত শত কোটি টাকা তাঁর নিজ মালিকানাধীন মধুমতি ব্যাংকে স্থানান্তরিত করেছেন এবং শত শত কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লাভ হিসেবে গ্রহণ করছেন। অন্যদিকে, অর্থের অভাবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গরিব কর্মচারীরা মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না। সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।’
এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মেয়র সিটি করপোরেশন আইন ২০০৯, দ্বিতীয় ভাগের দ্বিতীয় অধ্যায়ের অনুচ্ছেদ ৯ (২) (জ) অনুযায়ী মেয়র পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন সাঈদ খোকন।
সাবেক এই মেয়রের ভাষ্য, ‘তাপস মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে গলাবাজি করে চলেছেন। আমি তাঁকে বলব, রাঘববোয়ালের মুখে চুনোপুঁটির গল্প মানায় না। দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন করতে হলে সর্বপ্রথম নিজেকে দুর্নীতিমুক্ত করুন। তারপর চুনোপুঁটির দিকে দৃষ্টি দিন।’
সাঈদ খোকন বলেন, ফুলবাড়িয়া মার্কেটে সিটি করপোরেশন কর্তৃক যে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে, আমি আগেও বলেছি এটা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ।
কারণ, মহামান্য আদালত কর্তৃক নির্দেশিত হয়ে ব্যবসায়ীদের বৈধকরণের আবেদন নিষ্পত্তির লক্ষ্যে আমরা করপোরেশনের ভোট সভায় সর্বসম্মতিক্রমে আলোচিত মার্কেটগুলোর নকশা সংশোধন বকেয়া ভাড়া আদায় সাপেক্ষে বৈধ ব্যবসা পরিচালনার অনুমতি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। বোর্ড সবার সিদ্ধান্ত মোতাবেক সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ নকশা সংশোধন করে এবং রাজস্ব বিভাগ সাত-আট বছরের বকেয়া ভাড়া আদায় করে ব্যবসায়ীদের বৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করার অনুমতি দেয়।
দক্ষিণ সিটির মালিকানাধীন ফুলবাড়িয়া সুপারমার্কেট-২–এ নকশাবহির্ভূত দোকান উচ্ছেদে গত ৮ ডিসেম্বর থেকে অভিযান চালানো হচ্ছে। এই মার্কেটে ৯১১টি নকশাবহির্ভূত দোকান রয়েছে। ফুলবাড়িয়া এলাকায় সুন্দরবন স্কয়ার সুপার মার্কেট নকশাবহির্ভূত দোকান উচ্ছেদে গত ১৭ ডিসেম্বর অভিযান শুরু করা হয়। এই মার্কেটে ৯৫৭টি নকশাবহির্ভূত দোকান রয়েছে।
অভিযান শুরুর পর ব্যবসায়ীরা দাবি করে আসছিলেন, তাঁরা করপোরেশনকে ভাড়া দিয়ে বৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এ বিষয়ে ডিএসসিসির বক্তব্য, অস্থায়ী দোকান বরাদ্দের ক্ষেত্রে শর্ত ছিল করপোরেশন চাইলে যেকোনো সময় এসব দোকান ভাঙতে পারবে। সেই হিসাবে তারা অভিযান চালিয়েছে।
অভিযান শুরুর পর অবৈধ দোকান বৈধ করে দেওয়ার নাম করে সাঈদ খোকন টাকা নিয়েছেন—এমন অভিযোগ ওঠে। আজকের এই মানববন্ধনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, সাঈদ খোকন তাঁদের বৈধভাবে ব্যবসা করার সুযোগ দিয়েছেন।
ফুলবাড়িয়া সুপারমার্কেট–২–এর দোকান মালিক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন ও নগর প্লাজা সুপার মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ দোকান বিক্রির নামে টাকা লোপাট করেছেন। এই দুই ব্যবসায়ীনেতার শাস্তিও দাবি করেন তাঁরা।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে সাঈদ খোকন নিঃস্ব–অসহায় বৈধ ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানান।