দেশীয় সংস্কৃতিকে সমুন্নত রেখে আন্তর্জাতিক মানের সুস্থ ও শিল্প সম্মত সিনেমা তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও সংগ্রাম নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ সিনেমার মাধ্যমে তুলে ধরার কথা বলেছেন তিনি।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৯ প্রদান অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে রবিবার (১৭ জানুয়ারি) তিনি এসব আহ্বান জানান। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে ক্রেস্ট ও সনদপত্র তুলে দেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সিনেমায় নিজস্ব শিল্প-সংস্কৃতি যেমন থাকবে তেমনি বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য যা দরকার সেগুলোও থাকতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে সেগুলো যেন গ্রহণযোগ্যতা পায়। পাশাপাশি আমাদের যে মহান অর্জন লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা যে বিজয় অর্জন করেছি, আমাদের সে বিজয়ের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, আমাদের চেতনা-সেগুলো সিনেমার মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে। চলচ্চিত্রে আমাদের নীতি-আদর্শ প্রতিফলিত হওয়া একান্ত দরকার।’
তিনি বলেন, ‘আমি অনুরোধ করবো মুক্তিযুদ্ধের ওপর সিনেমা তৈরির। জাতির পিতাকে ১৫ আগস্ট হত্যা করার পর আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। সে ইতিহাসটা যেন সবাই জানে। আর এ কাজটি ভালোভাবে করা সম্ভব সিনেমার মাধ্যমেই। আমাদের বিজয়ের ইতিহাসটা প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন মনে রাখতে পারে সেই ধরনের চলচ্চিত্র আরও নির্মাণ হওয়া দরকার।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি একজন রাজনীতিবিদ। যত বক্তৃতা দেই, মানুষকে যত কথাই বলি না কেন একটা নাটক, একটা সিনেমা, একটা গানের মধ্যে দিয়ে বা একটা কবিতার মধ্য দিয়ে কিন্তু অনেক কথা বলা যায়। এমন সিনেমা তৈরি করুন যেন পরিবার নিয়ে দেখা যায়। মানুষ বিনোদনের পাশাপাশি জ্ঞানও লাভ করতে পারে। নতুন নতুন শিখতে পারে।’
শিশুদের জন্য শিক্ষণীয় চলচ্চিত্র নির্মাণের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের শিশুদের জন্য সিনেমা তৈরি করা একান্তভাবে প্রয়োজন। এর মধ্য দিয়ে একটা শিশু তার জীবনকে দেখতে পারবে, বড় হতে পারবে। শিশুদের জন্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করা এবং তার মধ্য দিয়ে তাদের শিক্ষণীয় বিষয়গুলো প্রতিফলিত করা— এটাও কিন্তু করতে হবে। অনেক দায়িত্ব আগস্ট আমাদের জীবনটাকে পাল্টে দিলো। তারপর থেকে বাংলাদেশের সংস্কৃতি চর্চায় সেই গুরুত্বটাই নষ্ট হলো,আদর্শটা নষ্ট হলো। আমরা যে বাঙালি, আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির চিন্তা- চেতনাটাও নষ্ট হতে বসেছিল। এটা হলো বাস্তবতা।’
সাংস্কৃতিক জগতের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বাসায় সব সময় সকলের একটা অবাধ যাতায়াত ছিল। এমনটি ধানমন্ডি লেকের সামনে যখন শ্যুটিং হতো, তখন সবাই আমাদের বাসায় এসেই বসতো। চা-পানি খেতো,খাবার খেতো। আমার মা সবাইকে আপ্যায়ন করতেন।’
দুর্দশাগ্রস্ত শিল্পীদের পাশে দাঁড়ানোর কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই কষ্টটা যখন আমি দেখি, আর বিশেষ করে আমার ছোট বোন রেহানা যখন লন্ডনে থাকে, সে অনলাইনে পত্রিকা নিয়মিত পড়বে এবং কারও কোনও কষ্ট দেখলে সঙ্গে সঙ্গে আমাকে সে খবর পাঠায়। আমি চেষ্টা করি, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে। আমি জানি, যখন আমি আছি আমি হয়তো সহযোগিতা করে যাচ্ছি। কিন্তু যখন আমি থাকবো না, তখন কী হবে। সেই চিন্তা করেই কিন্তু এই চলচ্চিত্র শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট করা হয়েছে।’