গুরুতর অসুস্থ মায়ের জরুরিভিত্তিতে অক্সিজেন সাপোর্ট দরকার। ছেলে অ্যাম্বুলেন্সে মাকে নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটছিলেন। কোনো হাসপাতালই প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যাপ্ত অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে পারেনি। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে অ্যাম্বুলেন্সেই মা মৃত্যুবরণ করেন। অসহায়-নিরুপায় ছেলের কান্নার এই ছবিটি তুলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের প্রধান আলোকচিত্রী এসকে এনামুল হক।
এনামুল হক বলছিলেন, রাজধানীর উত্তরখানের বাসিন্দা মনোয়ারা বেগমকে (৫৫) নিয়ে তার ছেলে রায়হান একের পর এক রাজধানীর পাঁচটি হাসপাতালে যায়। কিন্তু, কোনো হাসপাতালই তাকে জরুরি অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে পারেনি। পরে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে অ্যাম্বুলেন্সেই ওই মায়ের মৃত্যু হলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার ছেলে। গুরুতর অবস্থায় মাকে প্রথমে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেন রায়হান। কিন্তু, সেখানে ভর্তি করানোর পরও অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া যায়নি। পরে সেখান থেকে রেফার করা হলে মাকে নিয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও আল রাজি ইসলামী হাসপাতাল হয়ে মুগদায় যান রায়হান।
দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বাড়ছে। গত মাসে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৬৫ হাজার ৭৯ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৮ হাজার জনই শনাক্ত হয়েছেন গত ১৪ দিনে।
গতকাল একদিনেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছয় হাজার ৪৬৯ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এটিই এখন পর্যন্ত দেশে একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত। এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ছয় লাখ ১৭ হাজার ৭৬৪ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের আগস্টের পর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছে গত মাসে।
গত বছরের মার্চে দেশে প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শানাক্ত হয়। এরপর জুনে হঠাৎ সংক্রমণ বেড়ে যায়। জুনে করোনায় আক্রান্ত ৯৮ হাজার ৩৩০ জনকে শনাক্ত করা হয়। আগস্ট পর্যন্ত সংক্রণের হার বাড়ছিল। আগস্টে শনাক্ত হয় ৭৫ হাজার ৩৩৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, গতকাল (সকাল ৮টা পর্যন্ত) করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫৯ জন। গত নয় মাসের মধ্যে এটিই একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। আর সংক্রমণের শুরু থেকে হিসাব করলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু। এর আগে গত বছরের ৩০ জুন ৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন নয় হাজার ১০৫ জন। মোট শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ৪৭ শতাংশ।
দেশে মোট পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং বর্তমান শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ২৮ হাজার ১৯৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এই সময়ে অন্তত দুই হাজার ৫৩৯ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন পাঁচ লাখ ৪৪ হাজার ৯৩৮ জন। মোট শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৮ দশমিক ২১ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে আরও জানা গেছে, গতকাল মারা যাওয়া ৫৯ জনের মধ্যে ৩৫ জন পুরুষ ও ২৪ জন নারী। তাদের মধ্যে একজনের বয়স ২১-৩০ বছরের মধ্যে, চার জনের বয়স ৩১-৪০ বছরের মধ্যে, ১১ জনের বয়স ৪১-৫০ বছরের মধ্যে, ১৩ জনের বয়স ৫১-৬০ বছরের মধ্যে এবং ষাটোর্ধ্ব রয়েছেন ৩০ জন।