বাজেট প্রস্তাবে ১৫ শতাংশ হারে ঢালাওভাবে কালো টাকা হিসেবে পরিচিত অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করার সুযোগ দেওয়া নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) বলেছে, এটি নিয়মিত করদাতাদের জন্য শাস্তিস্বরূপ।
নতুন বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় ব্যবসায়ীদের সংগঠনটি মনে করছে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাজেট বাস্তবায়ন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং।
বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন।
শুক্রবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠায় এমসিসিআই।
প্রশ্ন ছাড়া কালো টাকা সাদা করার সুযোগ ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়মিত করদাতাদের নিরুৎসাহী করবে মন্তব্য করে সংগঠনটি বলেছে, নিয়মিত করপ্রদানকারীদের জন্য এটি একটি শাস্তি হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। প্রকৃত অনুশীলনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ হারে কর আরোপসহ জরিমানার বিধান প্রবর্তন করে এই ব্যবস্থা প্রচলন করলে নিয়মিত করদাতারা উৎসাহিত হবে।
এবারের বাজেটে বিনাপ্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ, নগদ টাকা এবং শেয়ারসহ যে কোনো বিনিয়োগে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে ঢালাওভাবে বৈধ করার সুযোগ ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
আগামী জুলাই থেকে এক বছরের জন্য কালোটাকা সাদা করার সুযোগ পাবেন আগ্রহীরা।
একই সঙ্গে প্রশ্ন ছাড়া জমি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট কিনে থাকলেও এলাকা অনুযায়ী বেঁধে দেওয়া কর দিয়ে সেগুলো বৈধ করা যাবে।
এর আগে সবশেষ ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত শর্ত সাপেক্ষে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছিল। এ থেকে সরকারের খুব বেশি আয় না হওয়ায় পরের অর্থবছরে সেই সুযোগ আর রাখা হয়নি। একই সঙ্গে প্লট, ফ্ল্যাট ও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার সুযোগও তুলে নেওয়া হয়।
আগামী বাজেটের বাস্তবায়ন বিষয়ে এমসিসিআই বলছে, বাজেটকে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে বাজেট ব্যবস্থাপনায় গতিশীলতা, করনীতি সংস্কার, করব্যবস্থার অটোমেশন, কর সংগ্রহে সামগ্রিক সিস্টেম লস কমানো এবং কর প্রশাসনের সক্ষমতা বাড়ানোর আরও সুযোগ রয়েছে।
কর প্রশাসনে অর্থবহ কাঠামোগত পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়ে সংগঠনটি বলেছে, যথাযথভাবে রাজস্ব সংগ্রহ করতে সক্ষম করে তুলতে এটা প্রয়োজন।
নিয়মিত কর প্রদানকারী ব্যক্তি বা ব্যবসায়ীদের উপর আরও বেশি করের বোঝা চাপানো হচ্ছে মন্তব্য করে বিষয়টি সঠিকভাবে সমাধান করার জোর দাবিও তুলেছে সংগঠনটি।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সুপারিশ করা কর ব্যবস্থার চলমান সংস্কারের শর্তাবলীর কারণে করদাতারা চাপে পড়বে বলেও মনে করছে এমসিসিআই। এ বিষয়ে বলেছে, “আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর ঋণের শর্ত অনুযায়ী, কর-জিডিপির অনুপাত দশমিক ৫ শতাংশ হারে বাড়িয়ে ৮ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত করতে গিয়ে করদাতাদের উপর বাড়তি করের বোঝা চাপানোর সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে।”
বাজেট ঘাটতি কমাতে সরকারি প্রকল্পের অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যয় সীমিত করার জন্য যথাযথ আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার পরামর্শ তাদের।
ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণের পরিমাণ বাড়ানোর পরিকল্পনা অর্থনীতিতে ’চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণের বাইরে’ প্রভাব তৈরি করতে পারে, যার ফলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারীদের জন্য অর্থের ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে মনে করছে এমসিসিআই।
সংগঠনটি বলছে, “সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ে। যে চাপ শেষ পর্যন্ত বহন করতে হয় ভোক্তা বা জনগণকে।”
তারা এ দুই বিষয়ের মধ্যে যথাযথ সমন্বয়ে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ তাদের। এছাড়া ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ভবিষ্যতে ব্যবসা-বাণিজ্যের গতিকে শ্লথ করে দিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।
বাজেট নিয়ে বেশ কিছু প্রস্তাব ও পরামর্শ দিয়েছে এমসিসিআই। সেগুলো হল-
• নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাধ্যমে দরিদ্র মানুষদের সহায়তার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো।
• বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া।
• বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দামে উচ্চ ভর্তুকি নিয়ন্ত্রণ।
• করপোরেট করহারের ক্ষেত্রে নগদ লেনদেনের শর্তাবলী পুনর্বিবেচনা করা।
• ভ্যাট ব্যবস্থায় অটোমেশন চালু করা।• নির্মাণ, অবকাঠামো ইত্যাদি পরিসেবাতে উৎসে কর কর্তনের (টিডিএস) হার কমানো।
• ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা না বাড়িয়ে বরং করহার ২৫% থেকে ৩০% নির্ধারণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা।