চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) নেতারা রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে মিয়ানমারের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
শুক্রবার বেইজিংয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে সিপিসির আন্তর্জাতিক বিষয় সম্পর্কিত মিনিস্টার সান তাও এই প্রতিশ্রুতি দেন।
বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “সান তাও বলেছেন, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি থেকে তারা রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে অং সান সু চি ও তার পার্টির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন, যাতে এই সমস্যাটার শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়।
“যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোহিঙ্গাদের প্রথম দল যেন মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারে সেজন্য তারা সুচিসহ মিয়ানমানের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।”
বৃহস্পতিবার চীনা প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াংয়ের সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠকেও রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনা হয়।
রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে ফিরতে পারার মতো পরিবেশ তৈরিতে চীন মিয়ানমারকে রাজি করানোর পদক্ষেপ নেবে বলে লি খ্য ছিয়াং বৈঠকে প্রতিশ্রুতি দেন।
নিযাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও তার বাস্তবায়ন করেনি।
নজরুল ইসলাম বলেন, “চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা সান তাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের খুবই উচ্চ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, যা এই মুহূর্তে বিশ্বে বিরল।
“আগামীতে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ এবং চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে যোগাযোগ আরও ঘনিষ্ঠ এবং সম্পর্ক আরো গভীর হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন সান তাও।”
নজরুল ইসলাম বলেন, অদূর ভবিষ্যতে সিপিসির একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করবে বলে সান তাও জানিয়েছেন। বাংলাদেশ আওয়মী লীগের বিভিন্ন পর্যায় থেকেও প্রতিনিধি দল চীন সফর করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করছেন।
“তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে এখন খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে। চীন সবসময় বাংলাদেশের উন্নয়নে সহযোগিতা দিয়ে যাবে।”
১৯৯৩ সালে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে চীন সফরের কথা স্মরণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বৈঠকে বলেন, ওই সফরের পর থেকে দুই দলের মধ্যে একটা সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এটা যাতে অব্যাহত থাকে সেজন্য আওয়ামী লীগ সবসময়ই চেষ্টা করবে।
স্পিচ রাইটার বলেন, চীন বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার। আওয়ামী লীগ ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। দারিদ্র দূরীকরণ ও মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের মত বিষয়গুলোতে চীন ও বাংলাদেশের লক্ষ্য যে অভিন্ন, সে কথাও বৈঠকে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
“বঙ্গবন্ধুর দুইবার চীন সফরের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেন, ‘উনি (বঙ্গবন্ধু) বলেছিলেন, একটা নতুন চীন হচ্ছে।’ এখন আমি সেই চীন দেখতে পাচ্ছি।
“প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর ডায়েরি থেকে ‘নতুন চায়না’ নামে একটা বই সম্পাদনা করা হচ্ছে। চীনের ভবিষ্যত নিয়ে সে সময় বঙ্গবন্ধু ডায়েরিতে যা লিখেছিলেন, ওই বইতে সেটা আছে।”
বইটি প্রকাশিত হলে সান তাও সেটি চীনা ভাষায় অনুবাদ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানান নজরুল ইসলাম।