সংবাদ সংগ্রহের জেরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) কর্মরত সাংবাদিকদের গুলি করে হত্যার হুমকি দিয়েছে বিতর্কিত শাখা ছাত্রলীগ নেতা শোয়েব হাসান হিমেল এবং মো. রাইহান ওরফে জিসান। শুক্রবার (২০ জুলাই) রাত দশটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার সামনে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে তারা গালিগালাজ করেন এবং হত্যার হুমকি দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শুক্রবার রাত পৌনে দশটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম হল এবং শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল ছাত্রলীগের জুনিয়র কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গেলে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শোয়েব হাসান হিমেল সাংবাদিকদের অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করে ঘটনাস্থল থেকে সরে যেতে বলেন।
সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও যুগান্তর প্রতিনিধি তানভীর সাবিক প্রতিবাদ করলে হিমেল বলেন, ‘গুলি করবো। বুলেট সাংবাদিক চিনে না, সাংবাদিক পাইলেই গুলি করে মারবো।’
এসময় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো. রাইহান ওরফে জিসান বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সমকাল প্রতিনিধি আবু বকর রায়হানকে মারার জন্য তেড়ে আসেন। শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদসহ সিনিয়র নেতারা এ সময় তাদের থামানোর চেষ্টা করেন।
ঐদিন সন্ধ্যায় এক সাংবাদিককে চোখ তুলে নেওয়ার হুমকিও দেন হিমেল। অভিযুক্ত এই নেতা ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের ৫০২ নং কক্ষে অনুসারীদের নিয়ে রাতভর মাদক সেবন করেন বলেও জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী। ওই কক্ষের সামনে দিয়ে গেলে মাদকদ্রব্যের উৎকট গন্ধ পাওয়া যায় বলেও জানান তারা। এছাড়াও গত ১০ এপ্রিল প্রেমে ব্যর্থ হওয়ার জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে মেরে প্রাণনাশের হুমকি দেন হিমেল। এ ব্যাপারে গত ১৪ এপ্রিল ছাত্রলীগ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
প্রথমে অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরে ছাত্রলীগ নেতা শোয়েব হাসান হিমেল বলেন, ‘আমি রাগের মাথায় এটা বলেছি। আমার কাছে কালকে কোন অস্ত্র ছিল না।’ তবে ছাত্রলীগ নেতা জিসানকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, ছাত্রলীগ নেতা জিসান প্রায় রাতেই কাজী নজরুল ইসলাম হলের ৫০৬ নাম্বার কক্ষে মাদকের আসর বসান। অতিরিক্ত মদ্যপানে অসুস্থ হয়ে কয়েক মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালেও গিয়েছিল বিতর্কিত এই ছাত্রলীগ নেতা। ‘মইরা গেলে কবরে গিয়া হইলেও দুইডা কোপ দিয়া আসমু’ বলে গত সপ্তাহেও বণিক বার্তার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিকে হুমকি দেন জিসান। হলের সিনিয়র নেতা কর্মীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করাসহ দুই হলে মাদক ছড়ানোয় বেশ কয়েকবার নিউজের শিরোনামও হয়েছেন বিতর্কিত এই দুই নেতা।
মাদকের বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদ বলেন, ‘প্রশাসন যদি কোন ব্যবস্থা নেয় সেক্ষেত্রে শাখা ছাত্রলীগ সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে।’
অভিযোগের বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ‘সাংবাদিকদের হুমকি বা লাঞ্ছিত করলে তাদের দায় ছাত্রলীগ নিবে না। তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে প্রোক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘শিক্ষার্থীর পর সাংবাদিকরা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কাজ করেন। তাদের সঙ্গে যারা অছাত্রসুলভ আচরণ এবং হুমকি দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ছাত্র সংগঠন, সাংবাদিক ও আমরা সবাই মিলে ব্যবস্থা নিব। শুধু প্রোক্টর হিসেবে নয় শিক্ষক হিসেবেও আমি এমন ঘটনার প্রতি ধিক্কার জানাচ্ছি।’